Type Here to Get Search Results !

শনি গ্রহের নতুন ১২৮টি চাঁদ: সৌরজগতের চাঁদের রাজা

শনি গ্রহের নতুন ১২৮টি চাঁদ: সৌরজগতের চাঁদের নতুন রাজা


zatrisheba news. যাত্রীসেবা নিউজ,

সৌরজগতের সবচেয়ে বেশি চাঁদের মালিক এখন শনি গ্রহের। সম্প্রতি জ্যোতির্বিদরা শনির চারপাশে আরও ১২৮টি নতুন চাঁদের সন্ধান পেয়েছেন, যা শনি গ্রহের মোট চাঁদের সংখ্যা ২৭৪-এ নিয়ে গেছে। এর ফলে বৃহস্পতির চেয়ে দ্বিগুণেরও বেশি চাঁদের অধিকারী হয়েছে শনি, যা একসময় 'চাঁদের রাজা' হিসেবে পরিচিত ছিল।

শনি গ্রহের নতুন আবিষ্কার: গবেষণার অগ্রগতি

কানাডা-ফ্রান্স-হাওয়াই টেলিস্কোপের মাধ্যমে গবেষকরা শনির ৬২টি চাঁদ আগেই শনাক্ত করেছিলেন। তবে তখন আরও কিছু চাঁদের উপস্থিতির ইঙ্গিত পাওয়া গিয়েছিল। ২০২৩ সালে পুনরায় গবেষণা চালিয়ে বিজ্ঞানীরা ১২৮টি নতুন চাঁদ নিশ্চিত করেছেন। গবেষণা দলের প্রধান, তাইওয়ানের অ্যাকাডেমিয়া সিনিকার জ্যোতির্বিদ ড. এডওয়ার্ড অ্যাশটন জানান, বৃহস্পতির পক্ষে শনিকে ছাড়িয়ে যাওয়া এখন অসম্ভব।২০২৪ সালের ৫ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত বৃহস্পতির কক্ষপথে ৯৫টি চাঁদ নিশ্চিত করা হয়েছে, যা শনির তুলনায় অনেক কম। আন্তর্জাতিক জ্যোতির্বিদ্যা ইউনিয়ন (IAU) নতুন চাঁদগুলোকে স্বীকৃতি দিয়েছে। আপাতত এগুলো সংখ্যা ও অক্ষরের সংমিশ্রণে চিহ্নিত থাকলেও পরবর্তীতে গ্যালিক, নর্স ও ইনুইট দেবতাদের নামে নামকরণ করা হবে।

শনি গ্রহের নতুন চাঁদ ও গবেষণা প্রযুক্তি

নতুন আবিষ্কৃত চাঁদগুলোর বেশিরভাগই নর্স গ্রুপের অন্তর্ভুক্ত, যা ভাইকিং দেবতাদের নামে নামকরণের পরিকল্পনা চলছে। অ্যাশটনের মতে, এত চাঁদের জন্য নামকরণের নিয়ম কিছুটা শিথিল করা হতে পারে।এই চাঁদগুলো শনাক্ত করতে গবেষকরা ‘শিফট অ্যান্ড স্ট্যাক’ পদ্ধতি ব্যবহার করেছেন। এই প্রযুক্তির মাধ্যমে ক্রমান্বয়ে তোলা একাধিক ছবি একত্রিত করে চাঁদের চলাচলের পথ বিশ্লেষণ করা হয়, ফলে ক্ষুদ্র ও দূরবর্তী চাঁদগুলোও শনাক্ত করা সম্ভব হয়।

শনি গ্রহের নতুন চাঁদের বৈশিষ্ট্য

আবিষ্কৃত চাঁদগুলোর প্রতিটি ‘অনিয়মিত চাঁদ’ হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে। এগুলো সাধারণত আলু আকৃতির এবং কয়েক কিলোমিটার আয়তনের। এত সংখ্যক ক্ষুদ্র বস্তু শনাক্ত হওয়ায় এখন প্রশ্ন উঠছে, চাঁদের সংজ্ঞা কী হওয়া উচিত। ড. অ্যাশটন মনে করেন, চাঁদের সুনির্দিষ্ট সংজ্ঞা থাকা প্রয়োজন। তবে তিনি ধারণা করছেন, বর্তমান প্রযুক্তি দিয়ে শনির চারপাশে নতুন চাঁদ খুঁজে বের করা কঠিন হবে।

শনি গ্রহের চাঁদের উৎপত্তি ও ভবিষ্যৎ গবেষণা

বিজ্ঞানীরা মনে করছেন, শনির চারপাশের এই চাঁদগুলো সম্ভবত অতীতে সংঘর্ষের ফলে সৃষ্টি হয়েছে। সৌরজগতের প্রথম দিকে গ্রহগুলো যখন অস্থিতিশীল কক্ষপথে ঘুরছিল, তখন একাধিক সংঘর্ষের ফলে বড় বস্তু ভেঙে এসব চাঁদ গঠিত হয়েছে।নতুন চাঁদগুলোর বেশিরভাগ একই দলের অন্তর্ভুক্ত, যা ইঙ্গিত দেয় যে, এগুলো একসময় এক বিশাল বস্তু ছিল যা প্রায় ১০ কোটি বছর আগে কোনো সংঘর্ষে টুকরো হয়ে যায়। কানাডার ব্রিটিশ কলাম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ব্রেট গ্ল্যাডম্যান মনে করেন, এসব চাঁদ শনির ধরা পড়া বড় চাঁদগুলোর টুকরো হতে পারে, যা হয় শনির অন্য চাঁদের সাথে সংঘর্ষে, নয়তো ধূমকেতুর আঘাতে ভেঙে গেছে।

শনির বলয় ও চাঁদের সম্পর্ক

বিজ্ঞানীরা ধারণা করছেন, শনির বলয়ও একইভাবে গঠিত হয়েছে। হয়তো কোনো চাঁদ শনির মহাকর্ষীয় শক্তিতে ধ্বংস হয়ে বলয় তৈরি করেছে। নতুন চাঁদগুলোর গতিবিধি বিশ্লেষণের মাধ্যমে শনির বলয়ের উৎপত্তি সম্পর্কে আরও নতুন তথ্য পাওয়া যেতে পারে।

অন্য মহাকাশ গবেষণা ও ভবিষ্যৎ অনুসন্ধান

এদিকে, ইউরোপীয় মহাকাশ সংস্থার (ESA) 'হেরা' মিশন মঙ্গল গ্রহের সবচেয়ে ছোট চাঁদ ডেইমস পর্যবেক্ষণ করবে। এটি মঙ্গলের মাত্র ৩০০ কিলোমিটারের মধ্যে দিয়ে অতিক্রম করবে।ডেইমস মাত্র ৭ মাইল বিস্তৃত, যা হয় মঙ্গলের সংঘর্ষের ফলে তৈরি হয়েছে, নয়তো এটি কোনো গ্রহাণু, যা মঙ্গলের মহাকর্ষে আটকা পড়েছে। এছাড়া হেরা বৃহৎ চাঁদ ফোবোসের ছবি তুলবে এবং গ্রহাণু ডিমরফোসের দিকে যাত্রা করবে, যেখানে ২০২২ সালে নাসার মহাকাশযান সংঘর্ষ ঘটিয়েছিল। এই গবেষণা ভবিষ্যতে পৃথিবীর দিকে ধেয়ে আসা গ্রহাণুকে প্রতিরোধের কৌশল উন্নয়নে সহায়ক হতে পারে।

উপসংহার

শনি গ্রহের চারপাশে নতুন চাঁদের আবিষ্কার আমাদের সৌরজগত সম্পর্কে নতুন দৃষ্টিভঙ্গি এনে দিয়েছে। এই চাঁদগুলোর গঠন, সংঘর্ষ এবং শনির বলয়ের সম্পর্ক বোঝার মাধ্যমে বিজ্ঞানীরা আরও গুরুত্বপূর্ণ তথ্য জানতে পারবেন।সৌরজগতের গবেষণায় এই আবিষ্কার এক নতুন দিগন্ত উন্মোচন করেছে, যা ভবিষ্যতের মহাকাশ গবেষণায় আরও সহায়ক হবে।

🌐বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির আরো খবর পেতে প্রবেশ করুন।

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ
* Please Don't Spam Here. All the Comments are Reviewed by Admin.