পানির অভাবে ভবিষ্যৎ প্রজন্ম? ডেসালিনেশন হতে পারে ভরসা
পৃথিবীতে প্রচুর জল রয়েছে কিন্তু ব্যবহারযোগ্য মিঠা পানির পরিমাণ অত্যন্ত সীমিত। জল সংরক্ষণ ও সঠিক ব্যবস্থাপনা না করলে ভবিষ্যতে পানির সংকট ভয়াবহ রূপ নিতে পারে। তাই মিঠা পানির উৎসসমূহের সুরক্ষা এখনই জরুরি।তবে, লবণাক্ত জলকে মিঠা পানিতে রূপান্তর করার প্রযুক্তি বিদ্যমান, এবং এর নাম হলো ডেসালিনেশন (Desalination)। এটি এমন একটি প্রক্রিয়া যার মাধ্যমে সমুদ্র বা লবণাক্ত জলের থেকে লবণ ও অন্যান্য খনিজ উপাদান অপসারণ করে তা পান করার উপযোগী তৈরি করা যায়।
✅ পৃথিবীতে কি পরিমাণ জল রয়েছে?
পৃথিবীর মোট পৃষ্ঠতলের প্রায় ৭১% অংশ জল রয়েছে, এবং পরিমাণ প্রায় ১.৩৮ বিলিয়ন ঘন কিলোমিটার । তবে এই বিপুল পরিমাণ জলের মধ্যে মাত্র ২.৫% মিঠা পানি, বাকি ৯৭.৫% লবণাক্ত পানি যা মহাসাগর ও সমুদ্রে রয়েছে।
💚 জলের প্রধান উৎস:
মহাসাগর ও সমুদ্র ৯৭.৫% লবণাক্ত
হিমবাহ ও বরফ ৬৮.৭% (মিঠা পানির মধ্যে) জমাটবদ্ধ
ভূগর্ভস্থ পানি ৩০.১% (মিঠা পানির মধ্যে) ভূগর্ভস্থ
হ্রদ, নদী, জলাশয় ১.২% (মিঠা পানির মধ্যে) ব্যবহারের উপযোগী
অর্থাৎ, ব্যবহারের উপযোগী মিঠা পানি মাত্র ০.৩%।
মিঠা পানি কোন কোন দেশে বেশি রয়েছে?
বিশ্বের কিছু দেশ প্রাকৃতিকভাবে প্রচুর পরিমাণে মিঠা পানি ধারণ করে। নিচে বিশ্বের মিঠা পানিতে সমৃদ্ধ দেশগুলোর তালিকা ও বৈশিষ্ট্য দেওয়া হলো:
১. ব্রাজিল
ব্রাজিলে অবস্থিত মোট মিঠা পানির ১২% ।
আমাজন নদী বিশ্বের সবচেয়ে বৃহৎ নদী ব্যবস্থা।
বিশাল বৃষ্টিপাত এবং বনাঞ্চল এই জলসম্পদ ধরে রাখতে সাহায্য করে।
২. রাশিয়া
বিশ্বের অন্যতম বৃহৎ হ্রদ বৈকাল লেক রয়েছে এখানে।
এটি বিশ্বের সবচেয়ে গভীর ও সর্বাধিক মিঠা পানির আধার।
৩. কানাডা
প্রাকৃতিক হ্রদ ও নদীর দেশ বলা হয়।
কানাডায় রয়েছে প্রায় ২০ লক্ষ হ্রদ, যেগুলো মিঠা পানির বিশাল উৎস।
৪. চীন
ইয়াংৎসে ও ইয়েলো নদীসহ বহু নদী রয়েছে।
মিঠা পানির ব্যবহার অনেক বেশি রয়েছে।
৫. ইউনাইটেড স্টেটস (U.S.A)
মিসিসিপি নদীসহ বহু হ্রদ ও নদী রয়েছে।
গ্রেট লেইকস (Great Lakes) বিশ্বের সবচেয়ে বৃহৎ মিঠা পানির উতস।
ডেসালিনেশন প্রযুক্তি কিভাবে কাজ করে?
১. রিভার্স অসমোসিস (Reverse Osmosis):
সবচেয়ে প্রচলিত পদ্ধতি।
এক ধরনের পরিশোধন ফিল্টার ব্যবহৃত হয় যা লবণ ও দূষক আলাদা করে।
উচ্চচাপের মাধ্যমে পানি ফিল্টার করে বিশুদ্ধ পানি তৈরি করা হয়।
২. থার্মাল ডেসালিনেশন (Thermal Desalination):
লবণাক্ত পানি বাষ্পে পরিণত করা হয়, তারপর ঠাণ্ডা করে পানিতে রূপান্তর করা হয়।
লবণ থেকে আলাদা হয়ে শুধু বিশুদ্ধ পানি থেকে যায়।
কোন কোন দেশে ডেসালিনেশন প্ল্যান্ট বেশি ব্যবহৃত হয়?
সৌদি আরবে বিশ্বের সর্ববৃহৎ ডেসালিনেশন প্ল্যান্ট আছে এখানে
সংযুক্ত আরব আমিরাত (UAE) মরুভূমি অঞ্চল হওয়ায় বিশুদ্ধ পানির প্রধান উৎস ।
এটি ইসরায়েল উন্নত প্রযুক্তি দিয়ে সমুদ্র জলকে ব্যবহারযোগ্য করছে
অস্ট্রেলিয়া খরা প্রবণ অঞ্চল হওয়ায় সমুদ্র জল দিকে ঝুঁকছে
যুক্তরাষ্ট্র বিশেষ করে ক্যালিফোর্নিয়ায় পানি সংকটে ডেসালিনেশন জনপ্রিয় হয়ে উঠছে
💚 সুবিধা ও অসুবিধা:
সুবিধা:
বিশুদ্ধ পানির নতুন উৎস তৈরি হয়।
উপকূলবর্তী শুষ্ক অঞ্চলে পানির ঘাটতি কমায়।
শিল্প ও কৃষিতে পানি ব্যবহারের জন্য বিকল্প উৎস।
অসুবিধা:
ব্যয়বহুল প্রযুক্তি ও উচ্চ বিদ্যুৎ খরচ হয়।
লবণাক্ত বর্জ্য সমুদ্রে ফেরত দিলে পরিবেশ ক্ষতিগ্রস্ত হয়।
উন্নয়নশীল দেশগুলোর জন্য এই প্রযুক্তি স্থাপন কঠিন হয়।
পানির ক্রমবর্ধমান ঘাটতির মুখে লবণাক্ত পানি থেকে মিঠা পানি তৈরির ডেসালিনেশন প্রযুক্তি ভবিষ্যতের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ সমাধান হতে পারে। তবে এটি আরও সহজলভ্য, সাশ্রয়ী এবং পরিবেশবান্ধব করে গড়ে তুলতে গবেষণা ও উন্নয়নের প্রয়োজন রয়েছে।
💚 বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি সম্পর্কে আরো জানতে ক্লিক করুন।
হেডফোন ছাড়াই ব্যক্তিগতভাবে অডিও শোনার প্রযুক্তি আসছেপৃথিবী সম্পর্কে অবাক করা ১০টি তথ্য | জানুন আপনার গ্রহটিকে নতুন করেবিদ্যুৎ কে ও কখন আবিষ্কার করেছিলো | সম্পূর্ণ ইতিহাস ২০২৫ আপডেট১২৪ আলোকবর্ষ দূরের গ্রহে জীবনের সম্ভাবনা! নতুন এক সন্ধানে বিজ্ঞানীরা