আমেরিকায় গিয়ে এসাইলাম করলে সুবিধা ও অসুবিধা: বিস্তারিত গাইডলাইন
💚 এসাইলাম (Asylum) কী?
💚 আমেরিকায় এসাইলাম আবেদনের যোগ্যতা
এসাইলামের আবেদন করার জন্য কিছু নির্দিষ্ট শর্ত পূরণ করতে হয়:
1. যুক্তরাষ্ট্রে শারীরিকভাবে উপস্থিত থাকতে হবে।
2. দেশে ফেরত গেলে নির্যাতনের আশঙ্কা থাকতে হবে।
3. নির্যাতনের কারণ হতে হবে: বর্ণ, ধর্ম, জাতীয়তা, রাজনৈতিক মতাদর্শ, অথবা কোনো নির্দিষ্ট সামাজিক গোষ্ঠীর সদস্য হওয়া।
4. সাধারণত যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশের এক বছরের মধ্যে আবেদন করতে হয় (বিশেষ ক্ষেত্রে ব্যতিক্রম হতে পারে)।
💚 এসাইলামের আবেদন প্রক্রিয়া
১. Affirmative Asylum Process (স্বেচ্ছায় আবেদন):যারা বৈধভাবে যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশ করে USCIS এর মাধ্যমে সরাসরি এসাইলামের আবেদন করে থাকেন।
২. Defensive Asylum Process (ডিপোর্টেশন প্রতিরোধে আবেদন):
যারা অবৈধভাবে প্রবেশ করে ধরা পড়ে যান এবং তাদের ডিপোর্ট করা হতে পারে, তখন তারা ইমিগ্রেশন আদালতে আত্মরক্ষা হিসেবে এসাইলামের আবেদন করেন।
আবেদন করতে হয় Form I-589 পূরণ করে।
💚 আমেরিকায় এসাইলাম করলে সুবিধা
১. নিরাপত্তা ও আইনি সুরক্ষাএসাইলাম গ্রহণকারীরা যুক্তরাষ্ট্রে সরকারের কাছ থেকে নিরাপত্তা ও আইনি সুরক্ষা পান। নির্যাতন বা প্রাণনাশের আশঙ্কা থেকে মুক্ত থাকেন।
২. কর্মসংস্থানের সুযোগ
এসাইলাম আবেদনকারীরা এক সময় পর থেকে **Work Authorization (EAD)** এর জন্য আবেদন করতে পারেন। এটি তাদের কাজ করার আইনি অধিকার দেয়।
৩. স্থায়ী বসবাসের সুযোগ (গ্রিন কার্ড)
এসাইলাম গ্রহণের এক বছর পর **গ্রিন কার্ডের জন্য আবেদন** করা যায়। এটি যুক্তরাষ্ট্রে স্থায়ীভাবে বসবাস ও কাজ করার সুযোগ দেয়।
৪. পরিবারের সদস্যদের আবেদন
এসাইলাম প্রাপ্ত ব্যক্তি তাদের স্বামী/স্ত্রী ও ২১ বছরের নিচের সন্তানদের জন্য **আশ্রয় আবেদন করতে পারেন।
৫. শিক্ষা ও স্বাস্থ্যসেবা
এসাইলাম আবেদনকারীরা যুক্তরাষ্ট্রের পাবলিক স্কুল সিস্টেমে পড়াশোনা করতে পারেন। অনেক সময় তারা মেডিকেইড বা অন্যান্য সরকারি সহায়তা পেতে পারেন।
৬. নাগরিকত্বের পথে এগিয়ে যাওয়া
গ্রিন কার্ড পাওয়ার পাঁচ বছর পর তারা **যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিকত্বের জন্য আবেদন** করতে পারেন।
💚 আমেরিকায় এসাইলাম করলে অসুবিধা
১. আবেদন প্রক্রিয়া দীর্ঘ ও জটিলএসাইলাম আবেদন প্রক্রিয়া অনেক সময় বছরের পর বছর লেগে যেতে পারে। এতে মানসিক চাপ ও অনিশ্চয়তা থাকে।
২. আবেদন প্রত্যাখ্যাত হওয়ার ঝুঁকি
প্রমাণের অভাব, ভুল তথ্য বা সন্দেহজনক কেসের কারণে অনেক সময় আবেদন প্রত্যাখ্যাত হয়, যার ফলে ডিপোর্টেশন এর আশঙ্কা দেখা দেয়।
৩. আইনজীবী ব্যয় ও আইনি জটিলতা
এ ধরনের কেসে অভিজ্ঞ ইমিগ্রেশন অ্যাটর্নি প্রয়োজন হয়। তবে অনেকের পক্ষে সেই খরচ বহন করা কঠিন হয়।
৪. পরিবার থেকে বিচ্ছিন্নতা
এসাইলামের প্রক্রিয়ায় অনেকে দীর্ঘ সময় পরিবারের বাইরে থাকতে হয়, যা মানসিকভাবে কষ্টদায়ক।
৫. সরকারি সহায়তার সীমাবদ্ধতা
সব এসাইলাম আবেদনকারীর জন্য সরকারি সহায়তা বা ভাতা সহজলভ্য নয়। অনেক সময় কাজ না পেয়ে আর্থিক সংকটে পড়তে হয়।
৬. কর্মসংস্থানের বিলম্ব
আবেদনের পরপরই কাজের অনুমতি মেলে না। সাধারণত ১৫০ দিন পরে EAD আবেদন করা যায়, যা পেতে আরও সময় লাগে।
Ads:
💚 কিছু গুরুত্বপূর্ণ পরামর্শ
1. সত্য ও নির্ভরযোগ্য তথ্য দিন। মিথ্যা তথ্য দিলে আপনার আবেদন বাতিল হতে পারে।2. প্রয়োজনে আইনজীবীর সহায়তা নিন।
3. ডকুমেন্টেশন ঠিক রাখুন—যেমন: নির্যাতনের প্রমাণ, পুলিশ রিপোর্ট, মেডিকেল রিপোর্ট ইত্যাদি।
4. আবেদনের সময়সীমা মেনে চলুন—এক বছরের মধ্যে আবেদন করা বাঞ্ছনীয়।
5. আপনার কেসের ভবিষ্যতের পরিকল্পনা রাখুন—গ্রিন কার্ড ও নাগরিকত্বের দিকেও নজর রাখুন।
💚 এসাইলাম vs রিফিউজি: পার্থক্য কী?
| বিষয় | এসাইলাম | রিফিউজি || --------- | -------------------------------- | ----------------------------------------------- |
| অবস্থান | আবেদনকর্তা যুক্তরাষ্ট্রে উপস্থিত | নিজ দেশে বা তৃতীয় দেশে অবস্থানরত |
| প্রক্রিয়া | USCIS বা আদালতে আবেদন | জাতিসংঘ বা নির্দিষ্ট রিফিউজি প্রক্রিয়ার মাধ্যমে |
| অনুমতি | নিজে যুক্তরাষ্ট্রে এসে আবেদন | অনুমোদন পেলে যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশের অনুমতি |
উপসংহার
যুক্তরাষ্ট্রে এসাইলাম করা অনেকের জন্য একটি নতুন জীবনের পথ খুলে দেয়। তবে এই প্রক্রিয়াটি কেবল সুবিধার নয়, বরং এর পেছনে ঝুঁকি, কষ্ট, অপেক্ষা ও আইনি জটিলতা রয়েছে। তাই এসাইলামের সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে সব দিক বিবেচনা করা উচিত। সঠিক তথ্য, উপযুক্ত প্রমাণ এবং আইনি সহায়তা থাকলে এসাইলাম পেয়ে নতুন জীবনের সূচনা করা সম্ভব।