হেডফোন ছাড়াই ব্যক্তিগতভাবে অডিও শোনার প্রযুক্তি আসছে
*অনুবাদ: অনন্যা পালিভেলা | ১৬ মে, ২০২৫ | সকাল ৯:০০টা*
বিজ্ঞানের কল্পকাহিনিতে দীর্ঘদিন ধরেই শব্দ নিয়ন্ত্রণ একটি কৌশল হিসেবে ব্যবহৃত হয়ে আসছে। ‘ডিউন’ সিনেমায় যেমন ‘কোন অফ সাইলেন্স’ ব্যবহৃত হয় খোলা জায়গায় ব্যক্তিগত কথোপকথনের জন্য, আবার ‘ব্লেড রানার ২০৪৯’-এ বিলবোর্ড থেকে নির্দিষ্টভাবে পথচারীদের কানে বিজ্ঞাপন পৌঁছায়।
বাস্তবেও কিছু স্থাপত্য কাঠামো, ইচ্ছাকৃতভাবে বা দুর্ঘটনাবশত, শব্দের গতিপথকে নিয়ন্ত্রণ করে। যেমন, যুক্তরাষ্ট্রের ক্যাপিটল বিল্ডিংয়ের স্ট্যাচু হল-এ এক প্রান্তে বলা ফিসফিসে কথাও অন্য প্রান্তে স্পষ্টভাবে শোনা যায়—শব্দ তরঙ্গ দেয়ালের বাঁকানো গঠন অনুসরণ করে কেন্দ্রভূমিতে পৌঁছে যায়।তবে বিজ্ঞানীরা এখন চাইছেন শব্দকে আরও সূক্ষ্মভাবে নিয়ন্ত্রণ করতে—এমনকি ভবিষ্যতে হয়তো হেডফোন ছাড়াই শুধু নির্দিষ্ট ব্যক্তি শ্রোতার জন্য শব্দ পাঠানো সম্ভব হবে। কিন্তু বিষয়টি সহজ নয়। মানুষের শ্রবণযোগ্য শব্দতরঙ্গের পরিসীমা (২০ থেকে ২০,০০০ হার্টজ) সহজেই ছড়িয়ে পড়ে, তাই ব্যক্তিগত কথোপকথন গোপন রাখা কঠিন।
২০১৯ সালে একদল গবেষক লেজার ব্যবহার করে শব্দ পাঠানোর একটি পদ্ধতি আবিষ্কার করেন, যেখানে বাতাসের জলীয় বাষ্প লেজারের আলো শোষণ করে শব্দে রূপান্তরিত হয়। কিন্তু এই প্রযুক্তির সমস্যা ছিল—শব্দটি লেজারের পুরো রশ্মিপথ জুড়ে শোনা যেত, ফলে গোপনতা রক্ষা করা সম্ভব হতো না।
পরবর্তী একটি কৌশল ব্যবহার করে অতিস্বনক (ultrasonic) তরঙ্গের মাধ্যমে শব্দ নির্দিষ্টভাবে লক্ষ্যস্থলে পাঠানোর চেষ্টা করা হয়। যদিও এই তরঙ্গ মানুষের কানে শোনা যায় না, তবে এগুলো একে অপরের সঙ্গে সংঘর্ষ করে এমন এক তরঙ্গ তৈরি করে যার ফ্রিকোয়েন্সি মানুষের শ্রবণের মধ্যে পড়ে। এই প্রক্রিয়াকে বলা হয় *nonlinear interaction*।
এই ঘটনাটি রান্নাঘরেও ঘটে—গরম তেলে পানির ফোটা পড়লে অতিস্বনক তরঙ্গ তৈরি হয়, যা একত্রে বাতাসে মিশে শোনা যায় ‘সিজল’ শব্দ হিসেবে। এই কৌশলকে কাজে লাগিয়ে মার্কিন সেনাবাহিনী এবং পরবর্তীতে বেসরকারি কোম্পানি যেমন Holosonics ‘দিক-নির্দেশিত স্পিকার’ তৈরি করে। কিন্তু এই ক্ষেত্রেও সীমাবদ্ধতা থেকে যায়—শব্দ পুরো রশ্মিপথে শোনা যায়, শুধুমাত্র নির্দিষ্ট স্থানে নয়।
সম্প্রতি, পেনসিলভানিয়া স্টেট বিশ্ববিদ্যালয়ের একদল গবেষক একটি বিপ্লবী প্রযুক্তি উদ্ভাবন করেছেন—‘অডিবল এনক্লেভ’ বা শোনার জন্য ব্যক্তিগত স্থান। গবেষক ইউন জিং বলেন, “এটা যেন এক অদৃশ্য হেডসেট পরার মতো।”
তাদের গবেষণায় দেখা গেছে, যদি কেউ নির্দিষ্ট এক স্থানে দাঁড়ান, তাহলে কেবল তার কানে শব্দ পৌঁছায়, আশেপাশের কেউ কিছুই শুনতে পায় না। এর জন্য তাঁরা ব্যবহার করেছেন acoustic metasurface—এক ধরনের বিশেষ উপাদান যা ধ্বনি তরঙ্গকে প্রকৃতির সাধারণ বস্তুদের চেয়ে আলাদা ও নির্দিষ্টভাবে নিয়ন্ত্রণ করতে পারে।
তাঁরা থ্রি-ডি প্রিন্টারে তৈরি করেছেন প্যানেল, যার ভিতরে রয়েছে সরু জিগজ্যাগ আকৃতির বাতাসচলাচলের পথ। এই পথের দৈর্ঘ্য পরিবর্তন করে অতিস্বনক তরঙ্গকে বক্র পথে চালিত করা যায়। দুইটি স্পিকারের ওপর পাতলা এই মেটাসারফেস বসিয়ে তারা শব্দের তরঙ্গকে এক বিন্দুতে মিলিত করেন, এবং সেখানেই শব্দ শ্রবণযোগ্য হয়।
গবেষক ইউন জিং জানান, “শব্দের মান খুব ভালো না—আমরা মাত্র ৪ ডলারের ট্রান্সডিউসার ব্যবহার করেছি। তবে এটা একটি প্রাথমিক পরীক্ষামূলক মডেল এবং এটা কাজ করছে।”
এই প্রযুক্তি এখনো ‘ডিউন’ সিনেমার মতো সম্পূর্ণ ব্যক্তিগত শ্রবণ কক্ষ তৈরি করতে পারছে না, তবে গবেষকরা ভবিষ্যতে লাইব্রেরি, অফিস কিংবা পাবলিক জায়গাগুলোতে একাধিক “অডিবল এনক্লেভ” বসিয়ে, হেডফোন ছাড়াই ব্যক্তিগত অডিও শোনার সুযোগ তৈরি করতে চান।
💚 বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি সম্পর্কে আরো জানতে ক্লিক করুন। ১২৪ আলোকবর্ষ দূরের গ্রহে জীবনের সম্ভাবনা! নতুন এক সন্ধানে বিজ্ঞানীরা যুক্তরাষ্ট্রে ৫ কোটি বছরের প্রাচীন পাখির পায়ের ছাপের সন্ধান
* হেডফোন ছাড়া ব্যক্তিগত অডিও
* অডিবল এনক্লেভ প্রযুক্তি
* শব্দ নিয়ন্ত্রণের নতুন আবিষ্কার
* Acoustic metasurface কী
* ভবিষ্যতের অডিও প্রযুক্তি
আপনি চাইলে এই প্রতিবেদনটি নির্দিষ্ট সংবাদমাধ্যমের টোন অনুযায়ী আরও কাস্টমাইজ করে দিতে পারি।