Type Here to Get Search Results !

সোরিয়াসিস রোগ: কারণ, লক্ষণ, চিকিৎসা ও প্রতিরোধ | বিস্তারিত তথ্য

সোরিয়াসিস রোগ: কারণ, লক্ষণ, চিকিৎসা ও প্রতিরোধ | বিস্তারিত তথ্য

সোরিয়াসিস-রোগ-কারণ-লক্ষণ-চিকিৎসা-ও-প্রতিরোধ-বিস্তারিত-তথ্য


✅ সোরিয়াসিস কী?

সোরিয়াসিস হল এক প্রকার অটোইমিউন রোগ, যেখানে শরীরের প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা নিজ ত্বকের কোষকে আক্রমণ করে। ফলে ত্বকের কোষ স্বাভাবিকের তুলনায় ৫-৭ গুণ দ্রুত বৃদ্ধি পায়,যার ফলে ত্বকের উপর পুরু, লালচে আঁশের মতো স্তর তৈরি হয়। এই স্তরগুলি সাধারণত সাদা বা রূপালী রঙের হয় এবং এগুলিকে প্লেক (plaque) বলা হয়। সোরিয়াসিস শরীরের যেকোনো অংশে হতে পারে, তবে সাধারণত কনুই, হাঁটু, মাথার ত্বক এবং পিঠের নিচের দিকে বেশি দেখা যায়।

✅ কাদের আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি বেশি?

সোরিয়াসিসে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি কিছু কারণের উপর নির্ভর করে:

*বংশগতি: যদি পরিবারের কারো সোরিয়াসিস থাকে, তাহলে আপনার এই রোগে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা বেশি

* বয়স: যদিও যেকোনো বয়সে সোরিয়াসিস হতে পারে, তবে সাধারণত ১৫ থেকে ৩৫ বছর বয়সের মধ্যে প্রথম লক্ষণ দেখা যায়।

* ইমিউন সিস্টেমের সমস্যা: সোরিয়াসিস একটি অটোইমিউন রোগ, তাই যাদের ইমিউন সিস্টেম দুর্বল বা ত্রুটিপূর্ণ, তাদের আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি বেশি।
* কিছু নির্দিষ্ট সংক্রমণ: স্ট্রেপ্টোকক্কাল সংক্রমণ (যেমন স্ট্রেপ থ্রোট) গাট্টেট সোরিয়াসিসের (guttate psoriasis) কারণ হতে পারে।

* মানসিক চাপ: মানসিক চাপ সোরিয়াসিসের লক্ষণগুলিকে আরও খারাপ করতে পারে।

* কিছু ওষুধ: কিছু ওষুধ, যেমন লিথিয়াম এবং বিটা-ব্লকার, সোরিয়াসিসের ঝুঁকি বাড়াতে পারে।

* ধূমপান: ধূমপান সোরিয়াসিসের ঝুঁকি এবং তীব্রতা উভয়ই বাড়াতে পারে।

* অতিরিক্ত ওজন: অতিরিক্ত ওজন বা স্থূলতা সোরিয়াসিসের ঝুঁকি বাড়াতে পারে।

💙রোগটির ইতিহাস:

সোরিয়াসিসের ইতিহাস বেশ পুরনো। প্রাচীনকাল থেকেই এই রোগটি মানুষের মধ্যে বিদ্যমান ছিল, যদিও এটিকে অন্যান্য ত্বকের রোগের সাথে গুলিয়ে ফেলা হত।

প্রাচীন গ্রীস: হিপোক্রেটিস (খ্রিস্টপূর্ব ৪৬০-৩৭৭) প্রথম ত্বকের প্রদাহজনিত অবস্থার বর্ণনা দেন, যেখানে "সোর" (itch) এবং "লোপোই" (scaly) শব্দগুলি ব্যবহার করেছিলেন, যা সম্ভবত সোরিয়াসিস এবং অন্যান্য ত্বকের রোগকে নির্দেশ করত।
* রোমান যুগ: সেলসাস (খ্রিস্টপূর্ব ২৫ - খ্রিস্টাব্দ ৫০) একটি ত্বকের অবস্থার বিস্তারিত বর্ণনা করেছিলেন যা অঙ্গপ্রত্যঙ্গ এবং নখকে প্রভাবিত করত এবং লালচে আঁশযুক্ত ত্বক দ্বারা চিহ্নিত ছিল, যা সম্ভবত সোরিয়াসিস ছিল। গ্যালেন (খ্রিস্টাব্দ ১৩১-২০১) প্রথম "সোরিয়াসিস" শব্দটি ব্যবহার করেন, যদিও তার বর্ণনা সম্ভবত সেবোরিক ডার্মাটাইটিসকে নির্দেশ করত।

* মধ্যযুগ: এই সময়ে সোরিয়াসিসকে কুষ্ঠরোগের সাথে গুলিয়ে ফেলা হত। ফলে সোরিয়াসিসে আক্রান্ত ব্যক্তিরা সামাজিক stigmatism-এর শিকার হতেন এবং কুষ্ঠরোগীদের মতোই তাদের সাথে দুর্ব্যবহার করা হত।

* উনবিংশ শতাব্দী: অবশেষে উনিশ শতকে সোরিয়াসিসকে একটি স্বতন্ত্র রোগ হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়া হয়। ১৮০৯ সালে ইংরেজ চিকিৎসক রবার্ট উইলান বিভিন্ন ধরণের ত্বকের রোগের একটি সুস্পষ্ট বর্ণনা দেন, যার মধ্যে সোরিয়াসিসও অন্তর্ভুক্ত ছিল। তবে তিনি তখনও এটিকে "লেপ্রা ভালগারিস" (lepra vulgaris) নামে উল্লেখ করেছিলেন। ১৮৪১ সালে অস্ট্রিয়ান চিকিৎসক ফার্দিনান্দ ফন হেব্রা আনুষ্ঠানিকভাবে কুষ্ঠরোগ থেকে সোরিয়াসিসকে আলাদা করেন এবং এর আধুনিক নামকরণ করেন।

* বিংশ শতাব্দী এবং পরবর্তী: বিংশ শতাব্দীতে সোরিয়াসিসের কারণ এবং রোগ প্রক্রিয়া সম্পর্কে আরও অনেক কিছু জানা যায়। ১৯৬০-এর দশকে এটি একটি অটোইমিউন রোগ হিসেবে চিহ্নিত হয়। এরপর থেকে এর চিকিৎসার ক্ষেত্রে অনেক উন্নতি হয়েছে, যার মধ্যে রয়েছে টপিক্যাল ওষুধ, ফটোথেরাপি এবং ইমিউনোসাপ্রেসিভ ওষুধ।
বর্তমানে সোরিয়াসিসের কারণ সম্পূর্ণরূপে জানা না গেলেও, এটি বিশ্বাস করা হয় যে জিনগত এবং পরিবেশগত কারণগুলির একটি জটিল সংমিশ্রণের ফলে এই রোগ হয়। চিকিৎসা বিজ্ঞানের অগ্রগতির সাথে সাথে সোরিয়াসিসে আক্রান্ত ব্যক্তিরা এখন অনেক কার্যকর চিকিৎসার মাধ্যমে তাদের লক্ষণগুলি নিয়ন্ত্রণ করতে সক্ষম।







💙সোরিয়াসিসের কারণসমূহ:

১. জেনেটিক প্রভাব – 

পরিবারে কারও থাকলে ঝুঁকি বাড়ে।

২. ইমিউন সিস্টেমের গোলযোগ

 T-cells ত্বকে অতিরিক্ত কোষ তৈরি করে।

৩. স্ট্রেস ও মানসিক চাপ

৪.ইনফেকশন বা আঘাত

. ওষুধের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া 

(যেমন: বিটা-ব্লকার, লিথিয়াম)

6. ধূমপান ও অ্যালকোহল

7. শরীরের হরমোন পরিবর্তন

✅ সোরিয়াসিসের লক্ষণসমূহ:

লালচে, মোটা ও খুশকিযুক্ত ত্বকের স্তর
তীব্র চুলকানি ও জ্বালা
ত্বক ফেটে রক্তপাত হওয়া
নখ মোটা হয়ে যাওয়া বা ভেঙে যাওয়া
সন্ধিগঠনে ব্যথা (Psoriatic Arthritis)
ত্বকে সাদা-রূপালি খোসা পড়া

✅ সোরিয়াসিসের ধরন:

1. Plaque Psoriasis (সবচেয়ে সাধারণ)
2. Guttate Psoriasis
3. Inverse Psoriasis
4. Pustular Psoriasis
5. Erythrodermic Psoriasis (বিরল কিন্তু গুরুতর)

💚সোরিয়াসিসের চিকিৎসা পদ্ধতি:

১. মেডিকেল চিকিৎসা:

ক্রিম ও ওষুধ: কোর্টিকোস্টেরয়েড, সালিসাইলিক অ্যাসিড, ক্যালসিপোট্রিন
মৌখিক ও ইনজেকশন ওষুধ: মেথোট্রেক্সেট, সাইক্লোস্পোরিন, বায়োলজিক্স
লাইট থেরাপি (ফটোথেরাপি): UVB বা PUVA থেরাপি

২. ঘরোয়া ও প্রাকৃতিক উপায়:

ত্বক আর্দ্র রাখুন
ঠান্ডা পানি দিয়ে গোসল
এলোভেরা ও নারকেল তেল ব্যবহার
স্ট্রেস কমানো

৩. খাদ্যাভ্যাস ও জীবনধারা:

ফাস্ট ফুড, প্রসেসড খাবার এড়িয়ে চলা
ওমেগা-৩ সমৃদ্ধ খাবার খাওয়া
ধূমপান ও অ্যালকোহল পরিহার
নিয়মিত ব্যায়াম

✅ সোরিয়াসিস প্রতিরোধে করণীয়:

ত্বক পরিষ্কার ও আর্দ্র রাখা
ঠান্ডা-শুকনো আবহাওয়ায় বাড়তি যত্ন
মানসিক চাপ নিয়ন্ত্রণ
চিকিৎসকের পরামর্শে নিয়মিত ওষুধ সেবন           
💚স্বাস্থ্য ও চিকিৎসা সম্পর্কে আরো জানতে ক্লিক করুন।                                                                     হাইপোথাইরয়ডিজম: লক্ষণ, টেস্ট আর রিপোর্ট—একসাথে জেনে নিন!
💙💙💙💙💙💙💙💙💙💙💙💙

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ
* Please Don't Spam Here. All the Comments are Reviewed by Admin.