ভূমধ্যসাগরে লাশ হয়ে ফিরলেন মাদারীপুরের রিফাত
ইতালি যাওয়ার স্বপ্ন ডুবলো সাগরে।নিখোঁজের দীর্ঘ পাঁচ মাস পর অবশেষে রিফাত তালুকদার ফিরে এলেন—কিন্তু নিঃশব্দ, নিথর এক দেহ হয়ে।
শনিবার বিকেলে কান্নায় ভারী আকাশের নিচে মাদারীপুরের শিবচরের তালুকদারকান্দি গ্রামে পৌঁছায় তাঁর মরদেহ।
যেখানে একদিন তিনি স্বপ্ন বুনেছিলেন বিদেশ যাওয়ার, সেই ঘরেই এবার তাঁর শেষ ঠিকানা হলো পারিবারিক কবরস্থান।
স্বজনদের বুকফাটা কান্নার মাঝে লাশবাহী অ্যাম্বুলেন্সটি যখন বাড়ির উঠানে থামে, তখন যেন পুরো গ্রাম স্তব্ধ হয়ে যায়—স্বপ্ন ভাঙার এই দৃশ্যের সাক্ষী হয়ে।
মাদারীপুর, বাংলাদেশ –
ইতালির স্বপ্ন নিয়ে যাত্রা শুরু করেছিলেন মাদারীপুরের শিবচরের তরুণ রিফাত তালুকদার (২৫)। কিন্তু সেই স্বপ্ন শেষ হলো ভূমধ্যসাগরের নীল জলে চিরতরে ডুবে গিয়ে। গত ১৮ ডিসেম্বর লিবিয়া থেকে অবৈধভাবে ইউরোপে প্রবেশের সময় ট্রলার ডুবে যান রিফাত। ঘটনার পাঁচ মাস পর তাঁর মরদেহ দেশে ফিরে আসে, আর এক বুক কান্না নিয়ে পরিবারের হাতে তুলে দেওয়া হয়।
নিখোঁজ থেকে দাফন: স্বপ্নের রাস্তায় ভয়াবহ পরিণতি
রিফাত শিবচরের দ্বিতীয়খণ্ড ইউনিয়নের তালুকদারকান্দি গ্রামের হুমায়ুন তালুকদারের একমাত্র ছেলে। তিনি দালালের মাধ্যমে দেশ ত্যাগ করেন অক্টোবর ২০২৪-এ। প্রথমে দুবাই, তারপর লিবিয়া পৌঁছান। সেখানে আরও অনেক অভিবাসনপ্রত্যাশীর সঙ্গে অপেক্ষার পর, ১৮ ডিসেম্বর ভূমধ্যসাগর পাড়ি দেওয়ার চেষ্টা করেন।
কিন্তু মাঝ সাগরে নৌকার ইঞ্জিন বিস্ফোরিত হলে ট্রলারটি ডুবে যায়। গুরুতর আহত অবস্থায় লিবিয়ার কোস্টগার্ড তাঁকে উদ্ধার করে হাসপাতালে ভর্তি করায়। দুই দিন পর হাসপাতালেই রিফাতের মৃত্যু হয়।মরদেহের খোঁজ মেলে তিন মাস পর
ঘটনার পর রিফাতের সঙ্গে পরিবারের আর কোনো যোগাযোগ হয়নি। চলতি বছরের জানুয়ারিতে পরিবার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে আবেদন করে। এরপর ২৬ মার্চ লিবিয়ার একটি হাসপাতালের মর্গে রিফাতের মরদেহ শনাক্ত হয়। সরকারিভাবে মরদেহ দেশে ফেরত আনার ব্যবস্থা করা হয় এবং ১০ মে ২০২৫ বিকেলে তা শিবচরে পৌঁছায়।পরিবারের কান্না আর প্রশাসনের সহানুভূতি।রিফাতের বাবা হুমায়ুন তালুকদার বলেন,
“ওই দিন শেষবারের মতো ছেলের সঙ্গে কথা বলছিলাম। এরপর শুধু অপেক্ষা আর আশায় কেটেছে। একটাই ছেলে ছিল আমার। সব শেষ হয়ে গেল।”
রিফাতের মা শিল্পী বেগম কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলেন,
“আমার বাপজানকে ফিরাইয়া দাও, আল্লাহ... ও ছাড়া আমার আপন কেউ নাই।”
শিবচর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) পারভীন খানম জানান,
“সরকারি সহযোগিতায় মরদেহ দেশে ফিরিয়ে আনা হয়েছে। পরিবার চাইলে আরও সহযোগিতা দেওয়া হবে।”
💙 প্রবাসী সংবাদ আরো পেতে ক্লিক করুন।
বাংলাদেশিদের জন্য আমেরিকায় ওয়ার্ক পারমিট ভিসার চ্যালেঞ্জ ও সমাধানজার্মানির পারিবারিক, সাংস্কৃতিক ও ধর্মীয় ইতিহাস:জার্মানি: ভৌগলিক, সামাজিক, অর্থনৈতিক, রাজনৈতিক ও ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপট
♦️মূল বার্তা: অবৈধ পথে বিদেশযাত্রা নয়, সচেতনতা জরুরি♦️
রিফাতের মতো হাজারো তরুণ আজ ইউরোপের স্বপ্নে প্রাণ হারাচ্ছে। এই ঘটনার মাধ্যমে আমরা বারবার একটি বার্তা দিচ্ছি: জীবনের ঝুঁকি নিয়ে অবৈধ পথে বিদেশ যাওয়া নয়, সঠিক পথে পরিকল্পনা করেই ভবিষ্যতের দিকে এগোতে হবে।