আমেরিকায় স্টুডেন্ট ভিসা থেকে গ্রিন কার্ড পাওয়ার সম্পূর্ণ গাইড | ২০২৫ আপডেট
ভূমিকা
অনেক আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থী উচ্চশিক্ষার জন্য আমেরিকায় আসেন F-1 স্টুডেন্ট ভিসায়। কিন্তু পড়াশোনা শেষে তারা স্থায়ীভাবে বসবাস ও কাজ করতে চাইলে, লক্ষ্য থাকে “গ্রিন কার্ড” অর্জনের দিকে। এই কনটেন্টে আপনি জানতে পারবেন কীভাবে একজন শিক্ষার্থী স্টুডেন্ট ভিসা থেকে গ্রিন কার্ড পাওয়ার পর্যন্ত যাত্রা করতে পারেন—ধাপে ধাপে, বাস্তব উদাহরণসহ বিবরন দেয়া হয়েছে।
অনেক আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থী উচ্চশিক্ষার জন্য আমেরিকায় আসেন F-1 স্টুডেন্ট ভিসায়। কিন্তু পড়াশোনা শেষে তারা স্থায়ীভাবে বসবাস ও কাজ করতে চাইলে, লক্ষ্য থাকে “গ্রিন কার্ড” অর্জনের দিকে। এই কনটেন্টে আপনি জানতে পারবেন কীভাবে একজন শিক্ষার্থী স্টুডেন্ট ভিসা থেকে গ্রিন কার্ড পাওয়ার পর্যন্ত যাত্রা করতে পারেন—ধাপে ধাপে, বাস্তব উদাহরণসহ বিবরন দেয়া হয়েছে।
💚Step-by-Step: স্টুডেন্ট ভিসা থেকে গ্রিন কার্ডের পথ
Step 1: F-1 Student Visa শুরুটা এখানেই আপনি প্রথমে F-1 ভিসা নিয়ে আমেরিকায় পড়াশোনা করতে আসেন।এই ভিসা শুধুমাত্র শিক্ষার জন্য কিন্তু কাজ করার সীমিত অনুমতি থাকে।Step 2: OPT (Optional Practical Training)
পড়াশোনা শেষ করার পর আপনি ১২ মাস পর্যন্ত OPT-এর মাধ্যমে নিজের শিক্ষাক্ষেত্রে কাজ করতে পারেন।
STEM (Science, Technology, Engineering, Math) স্টুডেন্টদের জন্য OPT মেয়াদ হয় ৩ বছর পর্যন্ত।
Step 3: H-1B Work Visa – প্রথম বড় ধাপ
OPT শেষে যদি কোনো কোম্পানি আপনাকে স্পন্সর করে, তাহলে আপনি H-1B (Specialty Occupation) ভিসার জন্য আবেদন করতে পারেন।
এটি একটি নন-ইমিগ্রান্ট ওয়ার্ক ভিসা, যা ৩ বছর মেয়াদি এবং পরে ৩ বছর বাড়ানো যায়।
Step 4: PERM Labor Certification – গ্রিন কার্ডের প্রস্তুতি
কোম্পানি আপনাকে স্থায়ীভাবে নিয়োগ দিতে চাইলে তারা আপনার জন্য “PERM Labor Certification” প্রক্রিয়া শুরু করে।এটি দেখায় যে মার্কিন নাগরিকদের মধ্যে ওই পদে উপযুক্ত প্রার্থী পাওয়া যাচ্ছে না।
Step 5: I-140 (Immigrant Petition) ফাইল করা
PERM অনুমোদনের পর কোম্পানি USCIS-এ I-140 পিটিশন ফাইল করে।
এই ধাপে আপনাকে ও আপনার পরিবারকে গ্রিন কার্ডের প্রক্রিয়ায় আনা হয়।
Step 6: I-485 (Adjustment of Status) বা কনস্যুলার প্রসেসিং
I-140 অ্যাপ্রুভ হওয়ার পর আপনি “Adjustment of Status (I-485)” ফাইল করতে পারেন (যদি আপনি USA-তেই থাকেন)।অন্যথায়, নিজ দেশে গিয়ে কনস্যুলার প্রসেসিং করতে হয়।
বিকল্প পথসমূহ
১. Marriage to a U.S. Citizen
একজন স্টুডেন্ট যদি একজন মার্কিন নাগরিকের সঙ্গে বিয়ে করেন, তবে দ্রুত গ্রিন কার্ডের আবেদন করা যায়।এটি সবচেয়ে সহজ ও দ্রুত উপায়গুলোর একটি (যদি বৈধ ও বাস্তব বিয়ে হয়)।
২. Green Card Lottery (Diversity Visa Lottery)
কিছু দেশ, যেমন বাংলাদেশ, এখন এই প্রোগ্রামে অংশ নিতে পারছে না। তবে যদি আবার সুযোগ আসে, এটা অন্যতম সহজ পথ হতে পারে।৩. Asylum (যদি প্রযোজ্য হয়)
বিশেষ পরিস্থিতিতে (যেমন নির্যাতন, রাজনৈতিক হুমকি), একজন F-1 ভিসাধারী Asylum আবেদন করে গ্রিন কার্ডের দিকে এগোতে পারেন।সময়সীমা (Timeline)
ধাপ আনুমানিক সময়
OPT ১২–৩৬ মাস
H-1B ৩–৬ বছর
PERM + I-140 + I-485 ১–৩ বছর
মোট সময়: ৫–১০ বছর পর্যন্ত লাগতে পারে, নির্ভর করে ভিসা ক্যাটাগরি ও দেশভিত্তিক কোটা অনুযায়ী।
গুরুত্বপূর্ণ টিপস
স্ট্যাটাস সচেতন থাকুন: শিক্ষাজীবনে বা OPT চলাকালে স্ট্যাটাস লঙ্ঘন করলে পুরো প্রক্রিয়া ব্যাহত হতে পারে।
ইমিগ্রেশন অ্যাটর্নি নিন: Green Card প্রক্রিয়াটি জটিল হতে পারে। ভালো আইনজীবী থাকলে ঝুঁকি কম হয়।
সহজ ভাষায় প্রমাণ প্রস্তুত করুন: কাজ, শিক্ষা, ও কোম্পানির সঙ্গে সম্পর্ক প্রমাণের জন্য যথাযথ ডকুমেন্ট প্রস্তুত রাখা জরুরি।
আমেরিকায় স্টুডেন্ট ভিসা থেকে গ্রিন কার্ডে রূপান্তর করা সময়সাপেক্ষ হলেও পুরোপুরি সম্ভব। প্রয়োজন শুধু সঠিক পরিকল্পনা, সময়মতো পদক্ষেপ, এবং আইনি সহায়তা। উচ্চশিক্ষা, অভিজ্ঞতা ও দক্ষতার মেলবন্ধনই আপনাকে স্থায়ী নাগরিকত্বের দিকে এগিয়ে নেবে।
💚বর্তমানে স্টুডেন্ট ভিসা থেকে গ্রিন কার্ড পেতে প্রধান জটিলতা
১. H-1B লটারির সীমিত সুযোগ ও প্রতিযোগিতাOPT শেষ হওয়ার পর অধিকাংশ শিক্ষার্থী H-1B ওয়ার্ক ভিসার মাধ্যমে গ্রিন কার্ড প্রক্রিয়া শুরু করেন।
কিন্তু প্রতিবছর মাত্র ৮৫,০০০টি ভিসা ইস্যু হয়, যেখানে আবেদনকারীর সংখ্যা ৫-৭ লাখ ছাড়িয়ে যায়।
এটি একটি লটারিভিত্তিক সিস্টেম, তাই দক্ষতা থাকা সত্ত্বেও অনেকে বাদ পড়ে যান।
২. গ্রিন কার্ড কোটা ও ওয়েটিং টাইম
কিছু দেশ, যেমন ভারত বা চীন থেকে আবেদনকারীদের জন্য অপেক্ষার সময় ১০–১৫ বছর পর্যন্ত হতে পারে।
বাংলাদেশিদের জন্য অপেক্ষার সময় তুলনামূলক কম, তবে EB-2 ও EB-3 ক্যাটাগরিতে ব্যাকলগ থাকলে সময় বাড়ে।
৩. ইমিগ্রেশন নীতির অনিশ্চয়তা
রাজনৈতিক পরিবর্তনের কারণে ইমিগ্রেশন নীতির রূপ বদলে যেতে পারে।
কোনো প্রশাসন অভিবাসী-বান্ধব হলেও পরবর্তী প্রশাসন হঠাৎ করে নিয়ম কঠোর করে ফেলতে পারে।
৪. PERM Labor Certification এর জটিলতা
কোম্পানিকে প্রথমে প্রমাণ করতে হয় যে মার্কিন নাগরিকদের মধ্যে উপযুক্ত প্রার্থী নেইএটি কঠিন ও ব্যয়বহুল প্রক্রিয়া।
অনেক কোম্পানি এ ঝামেলায় যেতে চায় না, বিশেষ করে ছোট কোম্পানিগুলো।
৫. স্ট্যাটাস রক্ষা করা কঠিন
F-1 থেকে OPT ও তারপর H-1B—এই সময়ের মধ্যে স্ট্যাটাস বজায় রাখা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
যদি কোনো সময় কাজ বন্ধ হয়ে যায় বা কোর্স ফেলে দেওয়া হয়, তাহলে স্ট্যাটাস ভেঙে পড়ে এবং ডিপোর্টের ঝুঁকি তৈরি হয়।
৬. স্টুডেন্টদের ইমিগ্রেশন ইচ্ছা সন্দেহজনক হিসেবে দেখা
স্টুডেন্ট ভিসা মূলত “নন-ইমিগ্রান্ট ভিসা”।
ইমিগ্রেশন অফিসার যদি বুঝে ফেলেন যে আপনি আসলে গ্রিন কার্ডের লক্ষ্যেই এসেছেন, তাহলে আপনার ভিসা বাতিল হতে পারে।
৭. আইনগত খরচ ও সময়
পুরো প্রক্রিয়ায় ইমিগ্রেশন অ্যাটর্নি, ফাইলিং ফি, ট্রান্সলেশন, ডকুমেন্টস—সব মিলে খরচ হতে পারে $৫,০০০–$১৫,০০০ এর বেশি।
অনেক শিক্ষার্থীর পক্ষে এই ব্যয় বহন করা কঠিন।
স্টুডেন্ট ভিসা থেকে গ্রিন কার্ড পাওয়ার পথ এখনো সম্ভব, তবে অনেক বেশি পরিকল্পনা, ধৈর্য এবং আইনি সহায়তা দরকার।
নিয়মগুলো ক্রমাগত পরিবর্তনশীল, তাই ইমিগ্রেশন অ্যাটর্নির নিয়মিত পরামর্শ নেওয়া ও নিজ স্ট্যাটাস সম্পর্কে আপডেট থাকা জরুরি।
💚 প্রবাসী সংবাদ আরো পেতে ক্লিক করুন।