ভবিষ্যৎ কেন প্রবাসে? তরুণদের দেশত্যাগের পেছনে মূল কারণগুলো কি?

🧠 ভবিষ্যৎ কেন প্রবাসে? তরুণদের দেশত্যাগে আস্থা হারানোর পেছনের মূল কারণগুলো

💚 লেখাটি শুরু করা যাক একটি বাস্তবতা দিয়ে।

বাংলাদেশের তরুণ সমাজ আজ বিপর্যস্ত—স্বপ্ন দেখেও যারা বিশ্বাস হারিয়ে ফেলছে স্বপ্নের দেশের প্রতি। মেধা, সততা ও পরিশ্রমের যথাযথ মূল্যায়ন না থাকায় একের পর এক তরুণ বিদেশে পাড়ি জমাচ্ছেন—শুধু উন্নত ভবিষ্যতের আশায় নয়, বরং ন্যায্য সম্মান ও নিরাপদ জীবনের প্রত্যাশায়।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্যবসা প্রশাসন ইনস্টিটিউটের (আইবিএ) প্রাক্তন ছাত্র আশিক চৌধুরীর কথা এ প্রসঙ্গে উল্লেখযোগ্য। আশিকের দেশে ফিরে এসে নেতৃত্বের আসনে বসা অনুপ্রেরণার গল্প হলেও, এমন দৃষ্টান্ত আজ দুর্লভ। কারণ, অধিকাংশ মেধাবী তরুণই আর দেশে ফিরতে চান না।

🌍 কেন বাড়ছে প্রবাসমুখী প্রবণতা?

১. 🏫 অনুন্নত শিক্ষাব্যবস্থা

বাংলাদেশে শিক্ষা খাতে বাজেট বরাদ্দ অপ্রতুল। ২০২৪ সালের পরিসংখ্যান অনুযায়ী, জিডিপির মাত্র ০.৩% গবেষণায় বরাদ্দ এবং বাজেটের ১২% শিক্ষায়, যা বৈশ্বিক গড়ের তুলনায় হতাশাজনক। ফলত, বিশ্বমানের প্রতিযোগিতায় টিকে থাকার মতো দক্ষতা অর্জন করছেন না আমাদের শিক্ষার্থীরা।

২. 💼 চাকরির বাজারে অপ্রতুল সুযোগ

দেশে একজন প্রকৌশলী বা স্থপতির মাসিক আয় ২৫-৩০ হাজার টাকার মধ্যে, যা বিদেশি বাজারের তুলনায় নগণ্য। তদুপরি, ‘স্কিল ডেভেলপমেন্ট’ ও ‘টেকনিক্যাল ট্রেনিং’ ব্যবস্থা আধুনিক বিশ্বের সঙ্গে সমন্বয়হীন।

৩. 🏢 দুর্নীতি ও স্বজনপ্রীতির দুষ্টচক্র

যোগ্যতা নয়, এখানে প্রাধান্য পায় ‘চেনা মুখ’। রাজনৈতিক লেজুড়বৃত্তি, দপ্তরে দপ্তরে ঘুষের সংস্কৃতি, এবং ‘সংযোগ না থাকলে অযোগ্য’—এই বাস্তবতায় একজন সৎ তরুণ নিজেকে অসহায় মনে করেন।

৪. ⚖️ ন্যায্যতা ও নিরাপত্তার সংকট

আইনের শাসনের সূচকে (Rule of Law Index) বাংলাদেশের অবস্থান ১৪২ দেশের মধ্যে ১২৭তম। স্বাস্থ্য, শিক্ষা ও বিচারব্যবস্থার করুণ দশা তরুণদের দেশ থেকে বিমুখ করছে।

৫. 👪 পারিবারিক বিচ্ছিন্নতা ও ‘LAT Lives’

আজকাল অনেক তরুণ দম্পতি বাধ্য হচ্ছেন 'Living Apart Together'—অর্থাৎ সন্তান ও স্ত্রীর ভবিষ্যতের নিরাপত্তায় বিদেশে পাঠানো এবং স্বামী দেশের মধ্যে ব্যবসা বা চাকরির জন্য আটকে থাকা।

🔍 সমাধান কী?

✅ শিক্ষায় যুগোপযোগী রূপান্তর

✅ দক্ষতা ভিত্তিক কর্মসংস্থানের সৃষ্টি

✅ দুর্নীতি ও আমলাতন্ত্রে সংস্কার

✅ তরুণ উদ্যোক্তাদের জন্য সহজ অর্থায়ন ও অনুকূল পরিবেশ

✅ যোগ্যতার ভিত্তিতে নিয়োগ নিশ্চিত করা

✅ রাজনীতিকে পেশা নয়, সেবা ভাবার সংস্কৃতি গড়ে তোলা

📢 উপসংহার: সময় এখন প্রশ্ন করার । এই ‘ব্রেইন ড্রেইন’ কি একদিন আমাদের জাতিকে শূন্য করে দেবে না? আজ যাঁরা যাচ্ছেন, তাঁদের জায়গা পূরণ করবে কারা? আশিক চৌধুরীর মতো প্রতিভাদের ধরে রাখতে চাইলে, আমাদের এখনই কাঠামোগত পরিবর্তন শুরু করতে হবে।