কানাডায় ট্যুরিস্ট ভিসায় যাওয়ার সহজ গাইড: ডকুমেন্টস ও আবেদন পদ্ধতি
কানাডা বিশ্বের অন্যতম আকর্ষণীয় ও উন্নত দেশ । প্রাকৃতিক সৌন্দর্য, আধুনিক শহর আর সমৃদ্ধ সংস্কৃতি দেখতে প্রতিবছর লাখ লাখ মানুষ কানাডায় ভ্রমণ করেন। আপনি যদি বাংলাদেশ থেকে কানাডায় ভ্রমণ করতে চান, তাহলে প্রথমেই দরকার হবে ট্যুরিস্ট ভিসার বা (Visitor Visa)। এই কন্টেন্টে আপনি জানতে পারবেন ট্যুরিস্ট ভিসার জন্য প্রয়োজনীয় ডকুমেন্টস, আবেদন প্রক্রিয়া, ভিসা ফি, এবং কিছু গুরুত্বপূর্ণ টিপস।
✅ ১. কে কে কানাডার ট্যুরিস্ট ভিসার জন্য আবেদন করতে পারবেন?
যেকোনো বাংলাদেশি নাগরিক যিনি পর্যটনের উদ্দেশ্যে আত্মীয়/বন্ধুর বাসায় ঘুরতে কিংবা কোনো সামাজিক বা সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে যদি অংশ নিতে চান তাহলে তিনি এই ভিসার জন্য আবেদন করতে পারবেন।
✅ ২. প্রয়োজনীয় ডকুমেন্টস লিস্ট গুলো কি কি?
কানাডা ট্যুরিস্ট ভিসার জন্য নিম্নলিখিত কাগজপত্র প্রস্তুত রাখতে হবে।যেমন-
১. পাসপোর্ট (ন্যূনতম ৬ মাসের মেয়াদসহ অবশ্যই থাকতে হবে)
২. সম্প্রতি তোলা রঙ্গিন ছবি (সাইজ: ৩৫মিমি x ৪৫মিমি, সাদা ব্যাকগ্রাউন্ংগী
৩. ভিসার আবেদন ফর্ম (IMM5257)
৪. ভ্রমণ পরিকল্পনা (Travel Itinerary): কোন তারিখে কোথায় যাবেন, তা বিস্তারিত লিখুন।
৫. আর্থিক দলিল: ব্যাংক স্টেটমেন্ট (শেষ ৬ মাসের), সেলারি স্লিপ, ট্যাক্স রিটার্ন
৬. চাকরির প্রমাণপত্র: যদি চাকরিজীবী হন তাহলে অফিসের নো-অবজেকশন লেটার (NOC), চাকরির কনফার্মেশন লেটার।
৭. ব্যবসা সংক্রান্ত কাগজপত্র: যদি ব্যবসায়ী হন – ট্রেড লাইসেন্স, ইনকাম ট্যাক্স কাগজপত্র।
৮. প্রপার্টির দলিল/মূল্যবান সম্পদের কাগজ (যাতে প্রমাণ হয় আপনি দেশে ফিরবেন)
৯. আত্মীয় বা বন্ধুর ইনভাইটেশন লেটার (যদি কেউ ইনভাইট করে থাকে)
১০. ভ্রমণ বিমা (Travel Insurance) – আবশ্যিক না হলেও প্রস্তাবযোগ্য
১১. ভিসা ফি জমার রসিদ (CAD $100)
✅ ৩. আবেদন করার পদ্ধতি গুলোঃ
ধাপ ১: অনলাইনে অ্যাকাউন্ট তৈরি করতে হবে।
প্রথমে IRCC ওয়েবসাইটে গিয়ে একটি অ্যাকাউন্ট খুলতে হবে।
ধাপ ২: আবেদন ফর্ম পূরণ করুন
IMM5257 ফর্ম পূরণ করে প্রয়োজনীয় ডকুমেন্টস স্ক্যান করে আপলোড করতে হবে।
ধাপ ৩: ফি প্রদান
ভিসা ফি অনলাইনে ক্রেডিট কার্ড বা ডেবিট কার্ডের মাধ্যমে প্রদান করুন।
ধাপ ৪: বায়োমেট্রিকস জমা
আবেদন জমা দেওয়ার পর আপনাকে একটি Biometric Instruction Letter (BIL) দেওয়া হবে। তারপর আপনাকে নির্ধারিত ভিএফএস গ্লোবাল সেন্টারে গিয়ে বায়োমেট্রিক জমা দিতে হবে (ঢাকা/চট্টগ্রাম)।
ধাপ ৫: পাসপোর্ট সাবমিশন
যদি ভিসা অ্যাপ্রুভ হয়, তখন পাসপোর্ট সাবমিট করার জন্য ইমেইল আসবে।
✅ ৪. কতদিনে ভিসা হয়?
সাধারণত কানাডা ট্যুরিস্ট ভিসার প্রসেসিং টাইম ২০–৪৫ কর্মদিবস। তবে এটি ভিসা অফিসের ব্যস্ততা ও আপনার ডকুমেন্টসের নির্ভুলতার উপর নির্ভর করে।
✅ ৫. ট্যুরিস্ট ভিসার মেয়াদ
ভিসার মেয়াদ সাধারণত ৬ মাসের হয়ে থাকে।কিছু ক্ষেত্রে ৫-১০ বছরের মাল্টিপল এন্ট্রি ভিসাও দেয়া হয়, তবে প্রতি সফরে ৬ মাসের বেশি থাকা যায় না।
✅ ৬. কিছু গুরুত্বপূর্ণ টিপস
সবসময় সত্য তথ্য দিন। মিথ্যা তথ্য দিলে ভিসা বাতিল হয়ে যেতে পারে।
আর্থিক সক্ষমতার প্রমাণ দেখানো সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ।
টিকিট বুকিং আগেই করে না রাখাই ভালো – কারণ ভিসা না পেলে আর্থিক ক্ষতি হতে পারে।
Strong Ties বা দেশে ফেরার প্রমাণ দেখাতে হবে। যেমন: পরিবার, চাকরি, ব্যবসা, সম্পত্তি ইত্যাদি।
✅ ৭. কানাডার ভিসা রিফিউজ হলে করণীয়
আবেদন রিজেক্ট হলে প্রথমেই "ভিসা রিফিউজাল লেটার" ভালোভাবে পড়ুন।
কারণ বুঝে নতুনভাবে কাগজপত্র সাজিয়ে পুনরায় আবেদন করতে পারবেন।
🔚 উপসংহার
কানাডা ভ্রমণের স্বপ্ন অনেকের থাকে। সঠিক প্রক্রিয়া অনুসরণ করলে ট্যুরিস্ট ভিসা পাওয়া কঠিন নয়। উপরের ধাপগুলো অনুসরণ করে আপনি নিশ্চিন্তে আবেদন করে সাফল্য পাবেন। মনে রাখবেন, তথ্যের স্বচ্ছতা এবং আর্থিক সক্ষমতা প্রমাণই ভিসা পাওয়ার মূল চাবিকাঠি।