Type Here to Get Search Results !

#Advertisement

মারিয়ানা ট্রেঞ্চ: পৃথিবীর গভীরতম রহস্যময় খাদ জেনেনিন

মারিয়ানা ট্রেঞ্চ: পৃথিবীর গভীরতম রহস্যময় খাদ জেনেনিন

মারিয়ানা ট্রেঞ্চ: পৃথিবীর গভীরতম রহস্যময় সমুদ্র খাদ

ওহ হো, মারিয়ানা ট্রেঞ্চ! শুনলেই কেমন যেন একটা গা ছমছম করা অনুভূতি হয়, তাই না? ভাবুন তো, আমাদের এই সুন্দর পৃথিবীটার বুকে এত গভীর একটা জায়গা লুকিয়ে আছে, যেখানে সূর্যের আলোও পৌঁছাতে পারে না! যেন এক অন্য জগৎ। আসুন, আজকে আমরা সেই রহস্যময় মারিয়ানা ট্রেঞ্চ নিয়ে একটু গভীরে ডুব দিই, মানে আলোচনা করি আর কি!

প্রথমেই বলি, 

এই মারিয়ানা ট্রেঞ্চটা আসলে কী?

এটা হলো আমাদের প্রশান্ত মহাসাগরের নিচে একটা বিশাল, লম্বা আর খুব গভীর খাদ। অনেকটা যেন পাহাড়ের মধ্যেকার লম্বা ফাঁটল, তবে এটা পাহাড়ে নয়, একেবারে সমুদ্রের তলায়পৃথিবীর ভূত্বক যেখানে দুটো ভাগে ভাগ হয়ে গেছে, সেখানেই এই খাদটা তৈরি হয়েছে। চিন্তা করুন, এটা পৃথিবীর সবচেয়ে গভীর অংশ! যেখানে উপর থেকে কোনো আলো যায় না, আর পানির চাপ এতটাই বেশি যে সাধারণভাবে কোনো প্রাণীর বেঁচে থাকা প্রায় অসম্ভব। কিন্তু শুনলে অবাক হবেন, এরপরেও সেখানে কিছু অদ্ভুত জীবজন্তু দিব্যি টিকে আছে!

এই ট্রেঞ্চটা কোথায় জানেন? 

টা হলো পশ্চিম প্রশান্ত মহাসাগরে। আমাদের প্রতিবেশী দেশ জাপান আর ইন্দোনেশিয়ার প্রায় মাঝামাঝি জায়গায়, মারিয়ানা দ্বীপপুঞ্জের পাশেলম্বায় প্রায় আড়াই হাজার কিলোমিটার, আর চওড়ায় প্রায় ৭০ কিলোমিটারের মতো। অনেকটা যেন আমাদের দেশের কোনো একটা লম্বা নদীর মতো, তবে এটা পানির তলায়!

এবার আসা যাক গভীরতার কথায়। এটা কতটা গভীর ভাবলে সত্যিই মাথা ঘুরে যায়! এই খাদের সবচেয়ে গভীর জায়গাটার নাম হলো চ্যালেঞ্জার ডিপ। বিজ্ঞানীরা মেপে দেখেছেন, এর গভীরতা প্রায় ১০ হাজার ৯৮৪ মিটার। মানে প্রায় ৩৬ হাজারেরও বেশি ফুট! একটা সহজ উদাহরণ দিই, আমাদের এভারেস্ট পর্বত তো পৃথিবীর সবচেয়ে উঁচু চূড়া, তাই না? যদি সেই এভারেস্টকেও উল্টো করে এই খাদের মধ্যে ডুবিয়ে দেওয়া হয়, তাহলেও তার চূড়াটা সমুদ্রের পানির অনেক নিচে থাকবে! ভাবুন একবার!

আচ্ছা, এই গভীর খাদটা প্রথম কে বা কারা খুঁজে পেলেন জানেন? সেই ১৮৭৫ সালের কথা। ব্রিটিশদের একটা গবেষণা জাহাজ ছিল, নাম 'এইচএমএস চ্যালেঞ্জার'। তারা সমুদ্রের তলদেশ নিয়ে গবেষণা করছিল। সেই সময়ই প্রথম এই বিশাল খাদটার সন্ধান পান তারা। এটা বিজ্ঞানীদের জন্য বড় সন্ধান । আর সেই জাহাজের নামে খাদের গভীর অংশের নাম হয়েছে চ্যালেঞ্জার ডিপ।

এরপর ১৯৬০ সালে দুজন বিজ্ঞানী, জ্যাক পিকার্ড আর ডন ওয়ালশ, 'ট্রিয়েস্তে' নামের একটা বিশেষ ডুবোজাহাজে করে প্রথমবার এই চ্যালেঞ্জার ডিপের একদম তলায় পৌঁছেছিলেন। সেটা ছিল এক অবিশ্বাস্য ঘটনা! আর ২০১২ সালে বিখ্যাত হলিউড পরিচালক জেমস ক্যামেরন একা একটা ডুবোজাহাজে করে সেই গভীরতায় গিয়েছিলেন। সিনেমার পর্দায় তো অনেক কিছুই আমরা দেখি, কিন্তু উনি সত্যি সত্যি এতটা গভীরে গিয়েছিলেন!

এবার চলুন, একটু দেখি এই গভীর খাদে কী ধরনের প্রাণীরা বাস করে। যেখানে এত অন্ধকার, এত ঠান্ডা, আর এত বেশি জলচাপ, সেখানেও কিন্তু কিছু অদ্ভুত প্রাণী নিজেদের মানিয়ে নিয়েছে। যেমন ধরুন, বিভিন্ন ধরনের ছোট ছোট জীবাণু, যাদের আমরা খালি চোখে দেখতে পাই না। এদের মধ্যে অ্যামিবা জাতীয় অণুজীবও আছে। বিজ্ঞানীরা সেখানে কিছু অজানা আর খুব বিরল প্রজাতির মাছও খুঁজে পেয়েছেন। কিছু স্কুইড আছে, যাদের শরীর থেকে আলো বের হয়! ভাবুন তো, ঘোর অন্ধকারে নিজেদের আলোয় ঝলমল করছে! এছাড়া এলিয়েনদের মতো দেখতে কিছু অদ্ভুত প্রাণীও নাকি সেখানে দেখা যায়! আর মেরুদণ্ডহীন প্রাণীদের মধ্যে কিছু বিশেষ ধরনের কীটও আছে, যেমন 'হোলোথুরিয়ান্স'।

এই প্রাণীগুলো এত স্পেশাল কেন জানেন? 

কারণ এরা এমন একটা পরিবেশে বাস করে, যা আমাদের কল্পনারও বাইরে। একদম অন্ধকার, যেখানে কোনো আলো নেই। পানির চাপ এতটাই বেশি যে আমাদের শরীরের হাড়গোড় ভেঙে চুরমার হয়ে যাবে। আর তাপমাত্রা থাকে প্রায় বরফের মতো ঠান্ডা। কিন্তু এই প্রাণীগুলোর শরীর এমনভাবে তৈরি যে তারা এই কঠিন পরিস্থিতিতেও বেঁচে থাকতে পারে। এটা প্রকৃতির এক আশ্চর্য সৃষ্টি!

এই মারিয়ানা ট্রেঞ্চ আমাদের জন্য এত গুরুত্বপূর্ণ কেন?

 এর অনেক কারণ আছে। প্রথমত, এটা হলো বিজ্ঞানীদের গবেষণার একটা বিশাল ক্ষেত্র। এই গভীর খাদে কী ধরনের জীবন আছে, তারা কীভাবে বেঁচে আছে - এসব জানতে পারলে জীববিজ্ঞানে অনেক নতুন নতুন তথ্য আমরা জানতে পারব। ভবিষ্যতে হয়তো এই জ্ঞান ঔষধ শিল্পে, জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণে, এমনকি আমাদের পৃথিবীর জলবায়ু পরিবর্তন বুঝতেও সাহায্য করতে পারে।

দ্বিতীয়ত, এই গভীর সমুদ্রের চরম পরিবেশ আমাদের প্রযুক্তি পরীক্ষা করার একটা দারুণ সুযোগ করে দেয়। ডিপ সাবমারিন বা গভীর সমুদ্রের ডুবোজাহাজগুলো সেখানে পরীক্ষা করা হয়। কারণ পৃথিবীর সবচেয়ে কঠিন পরিবেশের একটা বাস্তব উদাহরণ হলো এই মারিয়ানা ট্রেঞ্চ।

আর তৃতীয়ত, অনেক বিজ্ঞানী মনে করেন, যদি আমরা এই মারিয়ানা ট্রেঞ্চের রহস্য পুরোপুরি ভেদ করতে পারি, তাহলে হয়তো একদিন মহাকাশের গভীরতাও আমরা জয় করতে পারব! কারণ দুটোই তো অনেকটা অজানা আর রহস্যে ভরা।

তবে একটা দুঃখের কথা শুনুন। এত দুর্গম একটা জায়গাতেও কিন্তু মানুষের ফেলা প্লাস্টিক আর বিষাক্ত রাসায়নিক পদার্থ পাওয়া গেছে! একটা গবেষণায় দেখা গেছে, চ্যালেঞ্জার ডিপের প্রায় ১০ কিলোমিটার নিচেও প্লাস্টিকের ব্যাগ আর ছোট ছোট মাইক্রোপ্লাস্টিক ভেসে বেড়াচ্ছে। এটা প্রমাণ করে যে আমাদের পরিবেশ দূষণ কোথাও থেমে নেই।

মারিয়ানা ট্রেঞ্চ: পৃথিবীর গভীরতম রহস্যময় খাদ জেনেনিন

আচ্ছা, এত গভীরে মানুষ বা যন্ত্র কীভাবে পৌঁছায় জানেন? 

এটা কোনো সহজ কাজ নয়। এর জন্য বিশেষ ধরনের প্রযুক্তি ব্যবহার করতে হয়। যেমন - ডিপ সাবমারিন, যা বিশেষভাবে তৈরি ডুবোজাহাজ। এছাড়া বায়ুচাপ প্রতিরোধী ক্যাপসুল ব্যবহার করা হয়, যেখানে মানুষ নিরাপদে নিচে যেতে পারে। রোবোটিক ড্রোনও ব্যবহার করা হয়, যা remotely controlled বা দূর নিয়ন্ত্রিত। আর অটোনোমাস আন্ডারওয়াটার ভেহিকেল (AUV) হলো এমন যন্ত্র, যা নিজে থেকেই পানির নিচে চলতে পারে এবং তথ্য সংগ্রহ করতে পারে।

সবশেষে এটাই বলার, মারিয়ানা ট্রেঞ্চ শুধু একটা গভীর খাদ নয়, এটা আমাদের পৃথিবীর রহস্যময় সৌন্দর্যের একটা প্রতীক। এটা আমাদের দেখিয়ে দেয় যে প্রকৃতি কতটা আশ্চর্যজনক আর শক্তিশালী হতে পারে। যদিও আমরা এখনো এর অনেক রহস্যের কিনারা করতে পারিনি, তবে এটা নিশ্চিত যে ভবিষ্যতে মারিয়ানা ট্রেঞ্চ বিজ্ঞান আর প্রযুক্তির জগতে নতুন দিগন্ত উন্মোচন করবে।

আসলে, আমাদের গ্রহে এখনো অনেক অজানা আর রহস্যময় স্থান রয়ে গেছে। মারিয়ানা ট্রেঞ্চের মতো এত গভীর জায়গায় জীবনের অস্তিত্ব পাওয়া প্রমাণ করে যে জীবন হয়তো যেকোনো পরিস্থিতিতেই টিকে থাকতে পারে। তাই আমাদের প্রযুক্তি আর পরিবেশ সচেতনতা নিয়ে একসাথে এগিয়ে যেতে হবে, যাতে আমরা এই অজানা জায়গাগুলোকে নিরাপদে আবিষ্কার করতে পারি এবং আমাদের এই সুন্দর পৃথিবীটাকে রক্ষা করতে পারি।

💚 বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি সম্পর্কে আরো জানতে আমাদের পাশেই থাকুন।