Type Here to Get Search Results !

#Advertisement

বাংলাদেশে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার চ্যালেঞ্জ ও প্রস্তুতি

বাংলাদেশে-কৃত্রিম-বুদ্ধিমত্তার-চ্যালেঞ্জ-ও-প্রস্তুতি

🧠 কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় বাংলাদেশ কতটা প্রস্তুত?

এখন প্রযুক্তিনির্ভর বিশ্ব। কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার বা AI  বৈপ্লবিক সম্ভাবনার নাম। যেমনি কৃষিতে, চিকিৎসায়, প্রশাসনে ও শিক্ষায় খাতে এআই আশীর্বাদ আবার অপব্যবহারে ও উঠছে আতঙ্কের কারণ সমূহ। এখন প্রশ্ন উঠেছে,এই চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় বাংলাদেশ কতটা প্রস্তুত হয়েছে?

💚 একটি ছবির গল্প: এআই দিয়ে গড়া বিভ্রান্তি

২০২৪ সালের আগস্ট মাসে বাংলাদেশের আটটি জেলায় বন্যা চলাকালীন ফেসবুকে ভাইরাল হয় একটি সাদা-কালো ছবি। ছবিতে দেখা যায়, এক শিশু কোমর পানিতে ডুবে ভীত-সন্ত্রস্ত অবস্থায় দাঁড়িয়ে আছে। অনেকেই শিশুটির পরিচয় জানতে চাইতে থাকেন। পরবর্তীতে জানা যায়—ছবিটি এআই দিয়ে তৈরি, বাস্তবে এমন কোনো শিশু ছিল না।

এটি কেবল একটি উদাহরণ। কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা কীভাবে আবেগ, মানবিকতা, এমনকি সত্যতাকেও প্রশ্নবিদ্ধ করে তুলতে পারে—তারই এক বাস্তব নমুনা।

🧑‍⚖️ বাংলাদেশে নেই আইনি কাঠামো

এআই ব্যবহারে সীমা নির্ধারণ, অপব্যবহার রোধ ও নিরাপত্তা বিধানে বাংলাদেশের এখনো কোনো সুনির্দিষ্ট আইন নেই। নেই কোনো জাতীয় নীতিমালা বা কোড অব কন্ডাক্ট। বিশ্বের অন্যান্য দেশের তুলনায় এটি বাংলাদেশকে এক বড় ঝুঁকিতে ফেলছে।

বিশ্বের দৃষ্টান্ত:

এখন ইউরোপীয় ইউনিয়নে এআই আইন পাস হয়েছে যা ঝুঁকিপূর্ণ এআই ব্যবস্থাকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারে।

যুক্তরাষ্ট্র: একাধিক AI আইন ও নির্বাহী আদেশ রয়েছে।

ভারত: ২০১৮ সালেই ‘ন্যাশনাল AI স্ট্র্যাটেজি’ তৈরি করেছে।

আমিরাত ও চীন: আলাদা নীতিমালায় এআই ব্যবহার সীমাবদ্ধ করেছে।

🛡️ এআই নীতিমালা না থাকায় কী সমস্যা?

বাংলাদেশে AI প্রযুক্তি ব্যবহারে আইন না থাকার ফলে নকল কণ্ঠ, ভুয়া ভিডিও, মিথ্যা প্রচারণা, রাজনৈতিক চরিত্র হননের মতো অপরাধগুলো প্রতিনিয়ত বাড়ছে। আইনের অভাবে ভুক্তভোগীরা প্রতিকার পাচ্ছেন না।

আইনি সীমাবদ্ধতার কয়েকটি দিক:

ভুয়া ছবি/ভিডিও তৈরি করে অপপ্রচার চালানো

Deepfake কনটেন্ট দিয়ে হয়রানি

এআই কন্টেন্ট দিয়ে মানবিক সহানুভূতি ভুল পথে ব্যবহার

📢 বিশেষজ্ঞদের মতামত

অধ্যাপক বিএম মইনুল হোসেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়:

“এআই মিসইউজের সুযোগ বাড়ছে, কারণ আইন নেই। প্রোপাগান্ডা ছড়ানো, ভুয়া তথ্য প্রচার, এসব সহজ হয়ে গেছে।”

আইনজীবী রাশিদা চৌধুরী নিলু বলেন:

“এআই ব্যবহার করে অপরাধ হলে সেটি কোন আইনে শাস্তিযোগ্য তা পরিষ্কার নয়। এ জন্য একটি সুনির্দিষ্ট আইন জরুরি।”

🧾 বাংলাদেশ সরকারের পদক্ষেপ

বাংলাদেশ সরকার একটি ‘জাতীয় কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা কৌশল’ পাশ করেছে ২০২০ সালে National AI Strategy তৈরিতে এখনো বাস্তবায়ন হয়নি। তারপর তৈরি হয় ‘খসড়া ন্যাশনাল এআই পলিসি’, তা এখনো অনুমোদনের অপেক্ষায় রয়েছে।

📌 প্রস্তাবিত উদ্যোগ ও সমাধান

🔹 জাতীয় এআই আইন প্রণয়ন: একটি পূর্ণাঙ্গ আইন তৈরি করতে হবে, যাতে AI ব্যবহার ও অপব্যবহার নির্ধারণ করে শাস্তির বিধান থাকবে।

🔹 ডেটা প্রটেকশন আইন বাস্তবায়ন: ব্যক্তিগত তথ্য যেন AI দ্বারা অপব্যবহার না হয়, তা নিশ্চিত করতে হবে।

🔹 AI মনিটরিং সেল গঠন: একটি বিশেষজ্ঞ টিম রাখতে হবে যারা দেশের AI কন্টেন্টের গুণমান, নিরাপত্তা ও সঠিকতা পর্যবেক্ষণ করবে।

🔹 শিক্ষা ও সচেতনতা: জনসাধারণ ও পেশাদারদের AI সম্পর্কে সচেতন করতে প্রশিক্ষণ ও কর্মশালা আয়োজন করা প্রয়োজন।

🔚 উপসংহার

বাংলাদেশ প্রযুক্তির ব্যবহারে পিছিয়ে নয়, কিন্তু নীতিগত প্রস্তুতিতে অনেকটাই পিছিয়ে। এখনই সময় সুনির্দিষ্ট আইন, নীতিমালা ও নিয়ন্ত্রণ কাঠামো তৈরি করে AI প্রযুক্তিকে সঠিক পথে ব্যবহার নিশ্চিত করা। নইলে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার চেয়ে বড় হয়ে উঠবে বাস্তবিক বিপদ।