মশা কেন কিছু মানুষকে বেশি কামড়ায়? জানুন বিজ্ঞানভিত্তিক ৮টি কারণ!
মশার কামড় আমাদের অনেকের কাছেই নিত্যদিনের যন্ত্রণার নাম। কিন্তু আপনি কি জানেন, বিশ্বের মাত্র ২০% মানুষ মশার কাছে সবচেয়ে প্রিয়? বাকি ৮০% তুলনামূলকভাবে অনেকটাই নিরাপদ। এই ‘ভাগ্যবানের’ দলে আপনি কেন নেই, সেটা জানার আগেই আসুন জেনে নিই— বিষয়টি শুধু অস্বস্তির মধ্যে সীমাবদ্ধ নয় বরং মশার মাধ্যমে ছড়াতে পারে প্রাণঘাতী রোগ।💚 মশার কামড়: কেবল বিরক্তি নয়, রোগের ঝুঁকিও!
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার তথ্য মতে, ২০২২ সালে ম্যালেরিয়ায় আক্রান্ত হয়েছেন প্রায় ২৫ কোটি মানুষ, যার মধ্যে ৬ লাখেরও বেশি মৃত্যু হয়েছে। একইসঙ্গে, ডেঙ্গু, জিকা, হলুদ জ্বর ও ওয়েস্ট নাইল ভাইরাসের মতো মশাবাহিত রোগেরও প্রাদুর্ভাব বাড়ছে— যার পেছনে আছে জলবায়ু পরিবর্তন ও মানবশরীরের কিছু বিশেষ বৈশিষ্ট্য।💚 বিজ্ঞান বলছে, এই ৮টি কারণে আপনাকে বেশি কামড়ায় মশা
১. রক্তের গ্রুপ
গবেষণা বলছে, টাইপ-O রক্তের মানুষ মশার কাছে সবচেয়ে আকর্ষণীয়। কারণ তারা শরীর থেকে নির্দিষ্ট রাসায়নিক নিঃসরণ করেন যা মশার জন্য খুবই আকর্ষণীয়। টাইপ-A ও টাইপ-B এর তুলনায় টাইপ-O গ্রুপধারীরা মশার প্রধান লক্ষ্যবস্তু।২. কার্বন ডাই অক্সাইড নিঃসরণ
আপনার নিঃশ্বাসের মাধ্যমে নির্গত **কার্বন ডাই অক্সাইড (CO₂)** মশাকে সহজেই আকর্ষণ করে। যারা বেশি শ্বাসপ্রশ্বাস নেন বা স্থুলতা কিংবা গর্ভাবস্থায় থাকেন, তারা বেশি CO₂ ছাড়েন— যা মশাকে টানে।৩. দেহের তাপমাত্রা ও ঘাম
ব্যায়াম বা উচ্চ তাপমাত্রায় শরীর ঘামলে নিঃসৃত ল্যাকটিক অ্যাসিড ও শরীরের উষ্ণতা মশার আকর্ষণ বাড়ায়। শরীর যত গরম, মশার চোখে আপনি ততটাই ‘আকর্ষণীয়’।৪. ত্বকের ব্যাকটেরিয়া
মানব ত্বকে থাকা ব্যাকটেরিয়ার ধরন ও ঘনত্ব মশাকে প্রভাবিত করে। কিছু ব্যাকটেরিয়া এমন গন্ধ তৈরি করে যা মশার জন্য অধিক আকর্ষণীয় হয়।৫. ঘামের গন্ধ ও রাসায়নিক যৌগ
২০২৪ সালের ইয়েল ইউনিভার্সিটির গবেষণায় উঠে এসেছে, মানুষের ঘামে থাকা কিছু নির্দিষ্ট যৌগ যেমন আমোনিয়া বা কারবোনিল মশাকে টানে, আবার কিছু যৌগ তাদের দূরে রাখে।৬. মদ্যপান
গবেষণায় প্রমাণিত, যারা মদ্যপান করেন (বিশেষ করে ১ লিটার বা তার বেশি), তাদের শরীরে কিছু রাসায়নিক পরিবর্তন ঘটে— যা মশাকে আকর্ষণ করে। তাই পার্টির পর বাড়ি ফিরে যদি বেশি মশার কামড় খান, অবাক হবেন না!৭. গর্ভাবস্থা
গর্ভবতী নারীরা সাধারণত বেশি কার্বন ডাই অক্সাইড ছাড়েন এবং তাদের শরীর কিছুটা বেশি গরম থাকে, যা মশার প্রিয় বৈশিষ্ট্য।#### ৮. জিনগত বৈচিত্র্য
মানুষের জেনেটিক প্রোফাইল ও মশার কাছে আকর্ষণীয় হওয়ার একটি বড় কারণ। রক্ত, ত্বকের গন্ধ, ঘামের রাসায়নিক উপাদানসহ নানা বিষয় নিয়ন্ত্রণ করে আপনার জিন। ফলে, এটি প্রাকৃতিকভাবেই নির্ধারিত হয়।💚প্রতিরোধের উপায় কী?
বিজ্ঞানীরা এখন এসব কারণকে কাজে লাগিয়ে এমন প্রযুক্তি বা প্রতিরোধব্যবস্থা তৈরি করতে চান, যা মশার আকর্ষণ কমাবে বা সেগুলোর বিস্তার রোধ করবে। ততদিন পর্যন্ত, কিছু সাধারণ সতর্কতা অনুসরণে মশার কামড় থেকে আংশিক মুক্তি পাওয়া সম্ভব—* পুরো শরীর ঢেকে রাখে এমন পোশাক পরুন
* মশানাশক বা রিপেলেন্ট ব্যবহার করুন
* ঘুমানোর সময় মশারী ব্যবহার করুন
* জলাবদ্ধতা ও গন্ধযুক্ত জায়গা পরিষ্কার রাখুন
উপসংহার:
মশার কামড়কে হালকাভাবে নেওয়ার সময় এখন আর নেই। কারণ এটি শুধু বিরক্তিকর নয়, জীবননাশকারী রোগ ছড়ানোর অন্যতম প্রধান মাধ্যম। আপনি যদি সেই ২০% মানুষের দলে পড়েন যাদের মশা বেশি কামড়ায়, তাহলে সচেতন হোন আজই। কারণ প্রতিরোধই হচ্ছে সবচেয়ে কার্যকর প্রতিকার।
🔗 **সূত্র:** Smithsonian Magazine, Yale University Study (2024), WHO Report 2022
মশার কামড়কে হালকাভাবে নেওয়ার সময় এখন আর নেই। কারণ এটি শুধু বিরক্তিকর নয়, জীবননাশকারী রোগ ছড়ানোর অন্যতম প্রধান মাধ্যম। আপনি যদি সেই ২০% মানুষের দলে পড়েন যাদের মশা বেশি কামড়ায়, তাহলে সচেতন হোন আজই। কারণ প্রতিরোধই হচ্ছে সবচেয়ে কার্যকর প্রতিকার।
🔗 **সূত্র:** Smithsonian Magazine, Yale University Study (2024), WHO Report 2022