Type Here to Get Search Results !

#Advertisement

ইংল্যান্ডে ওয়ার্ক পারমিট ভিসার আবেদন ও পূর্ণাঙ্গ গাইড

ইংল্যান্ডে-ওয়ার্ক-পারমিট-ভিসার-আবেদন-ও-পূর্ণাঙ্গ-গাইড
ইংল্যান্ডে ওয়ার্ক পারমিট ভিসা: বাংলাদেশিদের জন্য সম্পূর্ণ গাইড

বাংলাদেশ থেকে অনেকে ভালো আয়ের স্বপ্ন নিয়ে ইংল্যান্ডে যেতে চান। বিশেষ করে যারা বিদেশে চাকরি, ক্যারিয়ার গড়ার সুযোগ ও উন্নত জীবনযাপনের প্রত্যাশা করেন, তাদের জন্য ইংল্যান্ডের ওয়ার্ক পারমিট ভিসা একটি বড় সুযোগ। তবে ভিসা পাওয়ার জন্য সঠিক নিয়ম-কানুন, যোগ্যতা, খরচ ও আবেদন প্রক্রিয়া সম্পর্কে জানা জরুরি। আজকের এই গাইডে আমরা ধাপে ধাপে সব বিষয় আলোচনা করবো।

১. ইংল্যান্ডের ওয়ার্ক পারমিট ভিসা কী?

ইংল্যান্ডে ওয়ার্ক পারমিট ভিসা বলতে এমন ভিসাকে বোঝায় যা আপনাকে নির্দিষ্ট সময়ের জন্য সেখানে বৈধভাবে চাকরি করার অনুমতি দেয়। এটি মূলত UK Skilled Worker Visa, Temporary Worker Visa, Health and Care Worker Visa ইত্যাদি নামে পরিচিত।

এই ভিসা সাধারণত এমন ব্যক্তিদের জন্য দেওয়া হয় যাদের কাছে UK Home Office-এর অনুমোদিত কোনো নিয়োগকর্তার (Licensed Sponsor) চাকরির অফার থাকে।

 ২. বাংলাদেশিদের জন্য জনপ্রিয় ওয়ার্ক পারমিট ভিসার ধরন

বাংলাদেশি প্রার্থীদের জন্য যে ভিসাগুলো বেশি জনপ্রিয় সেগুলো হলো—

 ২.১ Skilled Worker Visa

* যোগ্য প্রার্থীদের নির্দিষ্ট স্কিল ও পেশায় কাজের সুযোগ দেয়।
* স্বাস্থ্যসেবা, আইটি, ইঞ্জিনিয়ারিং, শিক্ষকতা, হিসাবরক্ষণ ইত্যাদি পেশায় বেশি সুযোগ রয়েছে।

 ২.২ Health and Care Worker Visa

* ডাক্তার, নার্স, কেয়ারগিভার, স্বাস্থ্যকর্মীদের জন্য বিশেষ ভিসা।
* আবেদন ফি তুলনামূলক কম এবং ভিসা দ্রুত প্রসেস হয়।

 ২.৩ Temporary Worker Visa

* সিজনাল জব, স্পোর্টস, চ্যারিটি বা শর্ট-টার্ম কনট্রাক্টের জন্য।
* সময়সীমা সাধারণত ৬ মাস থেকে ১ বছর।

 ৩. ইংল্যান্ডের ওয়ার্ক পারমিট ভিসার জন্য যোগ্যতা

বাংলাদেশ থেকে আবেদন করতে চাইলে কিছু শর্ত পূরণ করতে হবে—
১. UK-এর অনুমোদিত কোনো নিয়োগকর্তার চাকরির অফার লেটার থাকা
২. Certificate of Sponsorship বা COS – অবশ্যই চাকরিদাতার প্রতিষ্ঠান থেকে প্রাপ্ত রেফারেন্স থাকতে হবে। 
৩. যোগ্যতা ও দক্ষতা – নির্দিষ্ট পেশার জন্য প্রয়োজনীয় ডিগ্রি, প্রশিক্ষণ বা অভিজ্ঞতা
৪. ইংরেজি ভাষা দক্ষতা – IELTS UKVI বা সমমানের পরীক্ষা পাস করতে হবে (সাধারণত ৫.০–৫.০ ব্যান্ড)
৬. আর্থিক সক্ষমতা – ব্যাংক স্টেটমেন্টে ন্যূনতম £১,২৭০ (প্রায় ১,৮০,০০০ টাকা) দেখাতে হবে
৭. বয়স অন্তত ১৮ বছর

৪. প্রয়োজনীয় কাগজপত্র

* বৈধ পাসপোর্ট
* চাকরির অফার লেটার ও CoS নম্বর
* শিক্ষাগত যোগ্যতার সনদ
* IELTS বা সমমানের ইংরেজি দক্ষতার প্রমাণ
* ব্যাংক স্টেটমেন্ট
* মেডিকেল টেস্ট রিপোর্ট (TB টেস্ট)
* পুলিশ ক্লিয়ারেন্স সার্টিফিকেট

৫. আবেদন প্রক্রিয়া (Step-by-Step)

**ধাপ ১: UK Home Office-এর ওয়েবসাইটে প্রবেশ করুন।
**ধাপ ২: আপনার ভিসার ধরন নির্বাচন করুন (যেমন: Skilled Worker Visa)।
**ধাপ ৩: অনলাইন আবেদন ফর্ম পূরণ করুন এবং ডকুমেন্ট আপলোড করুন।
**ধাপ ৪: ভিসা ফি ও স্বাস্থ্য বা হেলথ সারচার্জ (IHS Fee) পরিশোধ করে নিন।
**ধাপ ৫: VFS Global সেন্টারে বায়োমেট্রিকস দিন।
**ধাপ ৬: ভিসা প্রসেসিংয়ের জন্য অপেক্ষা করুন (সাধারণত ৩–৮ সপ্তাহ)।

. ভিসা ফি ও অন্যান্য খরচ (২০২৫ আপডেট)

| খরচের ধরন                           | খরচ                       

 Skilled Worker Visa যা ৩ বছর পর্যন্ত হয়,খরচ  £৭১৯ (প্রায় ১,০২,০০০ টাকা)   
 Skilled Worker Visa (৩ বছরের বেশি)  | £১,৪২৩ (প্রায় ২,০২,০০০ টাকা) 
 Health and Care Worker Visa         | £২৪৭–£৪৭৯                    
 IHS Fee (প্রতি বছর)                 | £৬২৪ (প্রায় ৮৮,০০০ টাকা)     
 TB টেস্ট                            | প্রায় ৮,০০০–১০,০০০ টাকা      
 পুলিশ ক্লিয়ারেন্স ফি                | ৫০০ টাকা                     

 ৭. কতদিনের জন্য ভিসা দেওয়া হয়?

* Skilled Worker Visa: সর্বোচ্চ ৫ বছর
* Temporary Worker Visa: ৬ মাস থেকে ২ বছর
* Health and Care Worker Visa: সাধারণত ৩–৫ বছর

 ৮. ভিসা নবায়ন ও স্থায়ী বসবাসের সুযোগ

আপনি যদি একই নিয়োগকর্তার অধীনে এবং একই পেশায় কাজ চালিয়ে যান, তাহলে ভিসা নবায়ন করা যায়।
* ৫ বছর চাকরির পর **Indefinite Leave to Remain (ILR)** বা স্থায়ী বসবাসের আবেদন করা সম্ভব।

 ৯. বাংলাদেশিদের জন্য কিছু বাস্তব পরামর্শ

* আবেদন করার পূর্বে  নিশ্চিত হোন যে নিয়োগকর্তা UK Licensed Sponsor List-এর মধ্যে আছে।
* নকল বা ভুয়া চাকরির অফার থেকে সাবধান থাকুন।
* IELTS UKVI-এর প্রস্তুতি আগে থেকে নিন।
* অফিসিয়াল ওয়েবসাইট যেমন NHS Jobs, GOV.UK, Indeed UK প্রবেশ করতে হবে।
* স্বাস্থ্য খাতে চাকরির সুযোগ বেশি, তাই মেডিকেল ও কেয়ার সেক্টরে স্কিল উন্নত করলে সুযোগ বাড়ে।

 ১০. ইংল্যান্ডে কাজের সুবিধা ও অসুবিধা

### সুবিধা
* উচ্চ বেতন ও ভালো জীবনমান
* পরিবারের সদস্যদের নিয়ে যাওয়ার সুযোগ
* স্বাস্থ্যসেবা ও শিক্ষা সুবিধা
* দীর্ঘমেয়াদে স্থায়ী বসবাসের সুযোগ
### অসুবিধা
* ভিসা ফি ও খরচ তুলনামূলক বেশি
* প্রতিযোগিতা বেশি
* আবহাওয়া ও সংস্কৃতির সাথে মানিয়ে নিতে সময় লাগে

 ১১. উপসংহার

বাংলাদেশ থেকে ইংল্যান্ডে ওয়ার্ক পারমিট ভিসা পাওয়া কঠিন হলেও অসম্ভব নয়। সঠিক যোগ্যতা, বৈধ চাকরির অফার, এবং প্রস্তুতি থাকলে সফলভাবে ভিসা পাওয়া সম্ভব। স্বাস্থ্য খাত, আইটি, ইঞ্জিনিয়ারিং এবং শিক্ষা খাতে বাংলাদেশিদের জন্য প্রচুর সুযোগ রয়েছে।
আপনি যদি ধৈর্য ধরে সঠিক নিয়ম মেনে আবেদন করেন, তাহলে হয়তো আগামী কিছু মাসের মধ্যেই আপনার হাতে থাকবে UK Work Permit Visa এবং সামনে খুলে যাবে নতুন জীবন ও ক্যারিয়ারের দরজা।