Type Here to Get Search Results !

কাতার সম্পর্কে সমস্ত তথ্য।

কাতার সম্পর্কে সমস্ত তথ্য।

কাতার সম্পর্কে সমস্ত তথ্য।

কাতার: পারস্য উপসাগরের সমৃদ্ধশালী রাষ্ট্র

ভৌগোলিক অবস্থান ও জলবায়ু

কাতার পারস্য উপসাগরের একটি গুরুত্বপূর্ণ দেশ, যা আরব উপদ্বীপের পূর্ব উপকূল থেকে উত্তর দিকে প্রসারিত হয়েছে। দেশটির দক্ষিণে সৌদি আরব এবং পশ্চিমে দ্বীপরাষ্ট্র বাহরাইন অবস্থিত। কাতারের জলবায়ু শুষ্ক ও মরুভূমিসুলভ, যেখানে কোনো স্থায়ী জলাশয় নেই। তবে এর অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক গুরুত্ব অত্যন্ত বিশাল।

ঐতিহাসিক পটভূমি

কাতারের ইতিহাস বহু শতাব্দী পুরোনো। প্রত্নতাত্ত্বিক গবেষণায় জানা যায়, প্রাচীনকালে এখানে বিভিন্ন সম্প্রদায়ের বসবাস ছিল। ইতিহাসবিদ হেরোডোটাসের মতে, কাতারে 'কান্নানিয়ান' নামে জেলে সম্প্রদায়ের অস্তিত্ব ছিল, যারা মৌসুমভিত্তিক মাছ শিকার করত। এছাড়াও, মেসোপটেমিয়ার আল উবায়েদ গোত্রের সাথে কাতারের ব্যবসায়িক সম্পর্কের প্রমাণ পাওয়া যায়। টলেমির মানচিত্রেও কাতারের উল্লেখ রয়েছে।

ইসলামের আগমন ও প্রসার

সপ্তম শতকে ইসলাম আগমনের পর কাতার ইসলামী শাসনের অন্তর্ভুক্ত হয়। মহানবী হযরত মুহাম্মদ (সা.) ইসলামের প্রচারের জন্য আলা আল হাদরামিকে এ অঞ্চলে পাঠান। সে সময় কাতারে বনু তামিম গোত্রের শাসন বিদ্যমান ছিল এবং তারা ইসলাম গ্রহণ করে। পরবর্তী উমাইয়া ও আব্বাসীয় খিলাফতের সময়ে কাতারের ব্যবসা-বাণিজ্যের ব্যাপক প্রসার ঘটে, বিশেষ করে মুক্তা আহরণ এবং পশুসম্পদ লালন-পালনে।

আধুনিক কাতারের অভ্যুদয়

কাতার ১৯১৬ সালে ব্রিটিশদের সঙ্গে চুক্তি স্বাক্ষর করে, যা আধুনিক কাতারের ভিত্তি স্থাপন করে। পরবর্তীতে ১৯৭১ সালে কাতার পূর্ণ স্বাধীনতা লাভ করে। ১৯৪০-এর দশকে তেলের সন্ধান পাওয়ার পর দেশটির অর্থনীতি ব্যাপকভাবে পরিবর্তিত হয় এবং এটি বিশ্বের অন্যতম ধনী দেশে পরিণত হয়।

বর্তমান রাজনৈতিক অবস্থা

কাতার একটি পরম রাজতান্ত্রিক রাষ্ট্র। ২০১৩ সালে শেখ তামিম বিন হামাদ আল থানি তার পিতা হামাদ বিন খলিফা আল থানির কাছ থেকে আমীরের পদ গ্রহণ করেন। বর্তমান প্রধানমন্ত্রী খালিদ বিন খলিফা বিন আব্দুল আজিজ আল থানি দেশটির প্রশাসনিক কার্যক্রম পরিচালনা করছেন।

প্রশাসনিক বিভাজন

কাতার ৮টি পৌরসভায় বিভক্ত:

আদ-দাওয়াহ (দোহা) - রাজধানী

আল রাইয়ান

আল ওয়াকর‍্যা

আল খোর

আল-শাহানিয়া

উম্মে সালাল

দায়্যান (লুসাইল শহর অবস্থিত)

আল সামাল

অর্থনৈতিক উন্নতি ও সমৃদ্ধি

কাতারের অর্থনীতি মূলত তেল ও প্রাকৃতিক গ্যাসের উপর নির্ভরশীল। ১৯৪০ সালে দুখানে তেলের সন্ধান পাওয়ার পর দেশটি অভূতপূর্ব অর্থনৈতিক উন্নতি লাভ করে। বর্তমানে এটি বিশ্বের অন্যতম ধনী দেশ এবং তরল প্রাকৃতিক গ্যাস (LNG) রপ্তানিতে শীর্ষ অবস্থানে রয়েছে। ২০১২ সালে কাতারের জিডিপি সর্বোচ্চ উচ্চতায় পৌঁছেছিল। এছাড়া, করমুক্ত অর্থনীতির কারণে দেশটির নাগরিকদের জীবনযাত্রার মান অত্যন্ত উন্নত।

জনসংখ্যা ও ভাষা

২০২৩ সালের হিসাব অনুযায়ী কাতারের জনসংখ্যা প্রায় ২৮ লাখের বেশি। তবে এর মধ্যে মাত্র ১৫% স্থানীয় নাগরিক, বাকিরা মূলত বিদেশি শ্রমিক। সরকারি ভাষা আরবি হলেও ইংরেজি আন্তর্জাতিক ব্যবসা ও প্রশাসনিক কার্যক্রমে ব্যবহৃত হয়।

শিক্ষা ও সংস্কৃতি

কাতারে শিক্ষার হার প্রায় ৯৭%। এটি একটি ইসলামী রাষ্ট্র হওয়ায় এখানকার সংস্কৃতি ইসলাম দ্বারা গভীরভাবে প্রভাবিত। এখানে নারীদের পোশাক ও জনসম্মুখে মদ্যপান কড়াভাবে নিষিদ্ধ। কাতারের জাতীয় দিবস ১৮ ডিসেম্বর, যা জাতীয় ঐক্যের প্রতীক হিসেবে উদযাপিত হয়।

পর্যটন ও ক্রীড়া

কাতার সাম্প্রতিক বছরগুলোতে পর্যটন শিল্পে ব্যাপক বিনিয়োগ করেছে। বিশ্বমানের অবকাঠামো, বিলাসবহুল হোটেল এবং সাংস্কৃতিক স্থাপনাগুলো পর্যটকদের আকৃষ্ট করে। ২০২২ সালে ফিফা বিশ্বকাপ সফলভাবে আয়োজনের মাধ্যমে কাতার বৈশ্বিক ক্রীড়াক্ষেত্রে নিজেদের শক্ত অবস্থান তৈরি করেছে।

উপসংহার

কাতার আজ বিশ্বের অন্যতম সমৃদ্ধশালী ও শক্তিশালী অর্থনীতির দেশ। তেল ও গ্যাসের বিশাল মজুদের কারণে এটি দ্রুত বিকশিত হয়েছে। প্রাচীন ইতিহাস, ইসলামী ঐতিহ্য এবং আধুনিক উন্নয়নের সমন্বয়ে গঠিত কাতার ভবিষ্যতে আরও সমৃদ্ধ হবে।

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ
* Please Don't Spam Here. All the Comments are Reviewed by Admin.