সৌদি আরবে ১৪ দেশের জন্য ব্লক ওয়ার্ক ভিসা স্থগিত

সৌদি আরবের ভিসা নীতিতে বড় পরিবর্তন: ১৪ দেশের জন্য ব্লক ওয়ার্ক ভিসা স্থগিত, বিপাকে ভারত-বাংলাদেশসহ বহু শ্রমিক

রিয়াদ, মে ৩০, ২০২৫ – 

সৌদি আরব সরকার আকস্মিকভাবে ১৪টি দেশের নাগরিকদের জন্য ব্লক ওয়ার্ক ভিসা (Block Work Visa) কোটা স্থগিত করেছে। এই কঠোর সিদ্ধান্ত ২০২৫ সালের জুন মাস পর্যন্ত কার্যকর থাকবে, যা আসন্ন হজ মৌসুমের সমাপ্তির সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ। এই পদক্ষেপের ফলে ভারত, বাংলাদেশ, পাকিস্তান এবং মিশরসহ এশিয়ার ও আফ্রিকার বহু দেশের কয়েক লক্ষ শ্রমিক ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠান গভীরভাবে প্রভাবিত হবে। হজ মৌসুমের ভিড় নিয়ন্ত্রণ এবং অবৈধ অভিবাসন ঠেকানোর বৃহত্তর প্রচেষ্টার অংশ হিসেবেই এই পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে বলে জানা গেছে।

💚 কেন এই আকস্মিক স্থগিতাদেশ?

সৌদি আরবের মানবসম্পদ ও সামাজিক উন্নয়ন মন্ত্রণালয় (Ministry of Human Resources and Social Development) কর্তৃক ঘোষিত এই স্থগিতাদেশের প্রধান কারণগুলো হলো:

* শ্রমবাজার নিয়ন্ত্রণ: হজ মৌসুমের সময় শ্রমবাজারে অনাকাঙ্ক্ষিত জনস্রোত নিয়ন্ত্রণ করা।

* অবৈধ হজ অংশগ্রহণ প্রতিরোধ: বিদেশী কর্মীদের অবৈধভাবে হজ পালনে অংশ নেওয়া থেকে বিরত রাখা।

* অভিবাসন নীতি জোরদার: অভিবাসন নীতি ও ভিড় ব্যবস্থাপনার শৃঙ্খলা নিশ্চিত করা।

এই ১৪টি দেশ হলো: ভারত, পাকিস্তান, বাংলাদেশ, মিশর, ইন্দোনেশিয়া, ইরাক, নাইজেরিয়া, জর্ডান, আলজেরিয়া, সুদান, ইথিওপিয়া, তিউনিসিয়া এবং ইয়েমেন, মরক্কো। এই দেশগুলো থেকে নতুন করে কোনো ব্লক ওয়ার্ক ভিসা ইস্যু করা হবে না।

💚 ব্লক ওয়ার্ক ভিসা কী এবং এর প্রভাব কী?

ব্লক ওয়ার্ক ভিসা হলো একটি পূর্ব-অনুমোদিত কোটা, যা সৌদি নিয়োগকর্তাদের নির্দিষ্ট সংখ্যক বিদেশী কর্মী নিয়োগের অনুমতি দেয়। একবার কোটা অনুমোদিত হলে, কোম্পানিগুলো তাদের নির্বাচিত প্রার্থীদের জন্য ওয়ার্ক এন্ট্রি ভিসার আবেদন করতে পারে।

তবে, এই সাময়িক স্থগিতাদেশের ফলে:

* নতুন কোটা বন্ধ: তালিকাভুক্ত ১৪টি দেশের জন্য কোম্পানিগুলোর নতুন কোটা ইস্যু করা হবে না।

* প্রক্রিয়াকরণে বিলম্ব: পূর্বে অনুমোদিত কোটাগুলির প্রক্রিয়াকরণেও বিলম্বের আশঙ্কা করা হচ্ছে।

* আবেদনকারীদের অনিশ্চয়তা: যাদের ওয়ার্ক এন্ট্রি ভিসার আবেদন বর্তমানে প্রক্রিয়াধীন, তাদের আবেদন বাতিল বা অনির্দিষ্টকালের জন্য স্থগিত হতে পারে।

* প্রবেশে বিধিনিষেধ: যাদের বৈধ ওয়ার্ক ভিসা আছে কিন্তু এখনো সৌদি আরবে প্রবেশ করেননি, তাদের প্রবেশে নিষেধাজ্ঞার সম্মুখীন হতে হতে পারে।

গুরুত্বপূর্ণ পরামর্শ: সংশ্লিষ্টদের ভ্রমণের আগে এয়ারলাইন বা নিকটস্থ সৌদি কূটনৈতিক মিশনের সঙ্গে যোগাযোগ করে তাদের ভ্রমণ যোগ্যতা যাচাই করে নেওয়ার জন্য অনুরোধ করা হয়েছে।

💚 অন্যান্য ভিসা ক্যাটাগরিতেও কঠোরতা

ব্লক ওয়ার্ক ভিসা স্থগিতাদেশের পাশাপাশি, সৌদি আরব আরও বেশ কয়েকটি ভিসা ক্যাটাগরিতে সাময়িক বিধিনিষেধ আরোপ করেছে, যা সামগ্রিক ভ্রমণ ব্যবস্থাকে প্রভাবিত করছে:

* ওমরাহ ভিসা: একই ১৪টি দেশ থেকে ওমরাহ ভিসার আবেদন বর্তমানে স্থগিত রয়েছে, বিশেষ করে তীর্থযাত্রার ব্যস্ত সময়ে। যদিও সিস্টেম আবেদন গ্রহণ করতে পারে, তবে অনুমোদন পাওয়া বিরল।

* ফ্যামিলি ভিজিট ভিসা: বেশ কয়েকটি দেশের জন্য ফ্যামিলি ভিজিট ভিসা প্রক্রিয়া সাময়িকভাবে বন্ধ করা হয়েছে। অনেক আবেদন অনিশ্চিতভাবে অনিষ্পন্ন রয়েছে।

* বিজনেস ভিজিট ভিসা: ব্যবসায়িক কাজে আগত বিদেশী পেশাদারদের জন্য ভিসা প্রক্রিয়াকরণেও বিলম্ব বা নীরব বাতিল করা হচ্ছে।

* পর্যটন ভিসা: ২০২৫ সালের ১লা ফেব্রুয়ারি থেকে এই ১৪টি দেশের নাগরিকদের জন্য একাধিক প্রবেশ (Multiple-Entry) পর্যটন ভিসা বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। এখন শুধুমাত্র একক প্রবেশ (Single-Entry) ভিসার আবেদন বিবেচনা করা হচ্ছে।

💚 ২০২৫ সালের ১লা ফেব্রুয়ারি থেকে কার্যকর নতুন ভিসা নীতি

২০২৫ সালের ১লা ফেব্রুয়ারি থেকে সৌদি আরব ১৪টি প্রভাবিত দেশের জন্য একাধিক প্রবেশ (Multiple-Entry) ভিসা সম্পূর্ণরূপে নিষিদ্ধ করেছে। এই তারিখ থেকে:

* শুধুমাত্র একক প্রবেশ (Single-Entry) ভিসা অনুমোদিত।

* বিদ্যমান একাধিক প্রবেশ ভিসা ধারীরা সীমান্তে সমস্যার সম্মুখীন হতে পারেন।

* এই পরিবর্তন পর্যটন, ব্যবসা এবং পারিবারিক ভ্রমণ সব ক্ষেত্রেই প্রযোজ্য।

করণীয় কী?

এই পরিস্থিতিতে নিয়োগকর্তা, ভ্রমণকারী এবং নিয়োগ সংস্থাগুলির জন্য কিছু গুরুত্বপূর্ণ পরামর্শ:

* নিয়োগকর্তাদের জন্য: জরুরি নিয়োগের জন্য বিকল্প খুঁজে বের করা বা অ-নিষেধাজ্ঞাভুক্ত দেশগুলি থেকে প্রার্থী বিবেচনা করা।

* ভ্রমণকারীদের জন্য: উড্ডয়নের আগে ভিসা স্ট্যাটাস এবং প্রবেশের নিয়মাবলী নিশ্চিত করা।

* নিয়োগ সংস্থাগুলির জন্য: ক্লায়েন্টদের বিলম্ব সম্পর্কে অবহিত করা এবং দীর্ঘ সময়সীমার জন্য পরিকল্পনা করা।

* হজ ও ওমরাহ যাত্রীদের জন্য: ভিসা আবেদন পুনরায় শুরু হওয়ার বিষয়ে অফিসিয়াল হজ ও ওমরাহ পোর্টালগুলি পর্যবেক্ষণ করা।

উপসংহার:

সৌদি আরবের এই ভিসা নীতি পরিবর্তন একটি তাৎপর্যপূর্ণ পদক্ষেপ, যা ১৪টি দেশের বিদেশী শ্রমিক ও ভ্রমণকারীদের ব্যাপকভাবে প্রভাবিত করবে। এই নীতি মূলত হজ মৌসুমের জনস্রোত এবং অভিবাসন প্রবাহ নিয়ন্ত্রণের উদ্দেশ্যে প্রণীত হয়েছে বলে মনে করা হচ্ছে, এবং ২০২৫ সালের জুন মাসের পর এর শিথিল হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। তবে, এই সময়ের মধ্যে সংশ্লিষ্ট সকলকে সতর্ক থাকতে হবে, আগাম পরিকল্পনা করতে হবে এবং সরকারি চ্যানেলগুলির মাধ্যমে সর্বশেষ তথ্য জানতে হবে। এই কঠোরতা মধ্যপ্রাচ্যের শ্রমবাজারের গতিপ্রকৃতিতে একটি নতুন মাত্রা যোগ করেছে।

💚 প্রবাসী সংবাদ সম্পর্কে আরো জানতে ক্লিক করুন।

আমেরিকায় গিয়ে এসাইলাম করলে সুবিধা ও অসুবিধা: বিস্তারিত গাইডলাইনমালয়েশিয়ার এমপ্লয়মেন্ট ভিসা পাস ২০২৫যুক্তরাষ্ট্র (USA) ও যুক্তরাজ্য (UK) কী? ইতিহাস ও বিবরণ