Type Here to Get Search Results !

#Advertisement

নিম্ন রক্তচাপ কেনো হয় ও কাদের বেশী হয় ?

নিম্ন-রক্তচাপে-কারা-বেশি-ভোগেন-কারণ-ঝুঁকি-ও-সচেতনতা

নিন্ম রক্তচাপে কারা বেশি ভোগেন? – বাস্তবভিত্তিক সচেতনতা গাইড আপডেট 

নিম্ন রক্তচাপ বা Hypotension হলো এমন একটি অবস্থা যেখানে শরীরে স্বাভাবিক চেয়ে কম পরিমাণ রক্তচাপ প্রবাহিত হয়। সাধারণভাবে রক্তচাপের স্বাভাবিক মাত্রা হচ্ছে ১২০/৮০ mmHg। কিন্তু যদি এটি ৯০/৬০ mmHg বা তার নিচে নেমে যায়, তখন সেটিকে নিম্ন রক্তচাপ ধরা হয়।
অনেকেই ধারণা করেন, "লো প্রেসার মানেই ভালো!" কিন্তু এটি একেবারেই সঠিক নয়। দীর্ঘমেয়াদে বা অতিরিক্ত কম রক্তচাপ শরীরের গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গপ্রত্যঙ্গ যেমন—মস্তিষ্ক, কিডনিহৃদপিণ্ডে পর্যাপ্ত রক্ত না পৌঁছানোর কারণে মারাত্মক জটিলতা তৈরি করতে পারে।
❔আজকের এই কনটেন্টে আমরা জানব:

✅ কারা বেশি লো প্রেসারে আক্রান্ত হন
✅ কোন কোন অভ্যাস বা অবস্থা এর জন্য দায়ী
✅ অভিজ্ঞতা ও চিকিৎসা নির্দেশনা অনুযায়ী প্রতিকার কী

📊 নিম্ন রক্তচাপ সংক্ষেপে

* স্বাভাবিক রক্তচাপ: ১২০/৮০ mmHg
* নিম্ন রক্তচাপ: ৯০/৬০ mmHg বা এর নিচে
* লক্ষণ: মাথা ঘোরা, দুর্বলতা, দৃষ্টিভ্রম, ক্লান্তি, অজ্ঞান হয়ে যাওয়া

 🧍‍♀️ নিম্ন রক্তচাপ কারা বেশি ভোগেন?

 ১. 🧓 বৃদ্ধ ও প্রবীণ ব্যক্তিরা

**কারণ:
বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে হৃদযন্ত্র দুর্বল হয়, রক্তনালীগুলো কম সক্রিয় থাকে এবং শরীরের স্বাভাবিক রক্তচাপের ভারসাম্য বজায় রাখতে সমস্যা হয়।

**লক্ষণ:
* সকালে ঘুম থেকে উঠেই মাথা ঘোরা
* দাঁড়ালে অন্ধকার দেখা
* খুব বেশি ক্লান্ত থাকা

**প্রতিকার:
ধীরে ধীরে উঠা-বসা, পানি পান এবং পুষ্টিকর খাবার খাওয়া।

 ২. 👩‍🍼 গর্ভবতী নারীরা

**কারণ:
গর্ভাবস্থায় শরীরে রক্তপ্রবাহ বেড়ে যায় এবং হরমোন পরিবর্তনের কারণে রক্তচাপ কমে যেতে পারে—বিশেষত প্রথম ও দ্বিতীয় ট্রাইমেস্টারে।

**লক্ষণ:
* মাথা ঘোরা
* বমিভাব
* ক্লান্তি

**প্রতিকার:
প্রচুর পানি পান করা, ভারসাম্যপূর্ণ খাদ্য গ্রহণ, চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া।

 ৩. 👩‍⚕️ অনুভূতিশীল ও রোগা গঠনের নারীরা

**কারণ:
নরম ও দুর্বল রক্তনালী এবং কম রক্ত সঞ্চালনের কারণে রক্তচাপ অনেক সময় কমে যায়।
**ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা:
মাঝেমধ্যেই মহিলা রোগীরা জানান, দীর্ঘক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকলে অজ্ঞান হয়ে যান বা মাথা ঘোরে।

**প্রতিকার:
ঘনঘন পানি পান, আয়রন ও ভিটামিন যুক্ত খাবার খাওয়া, ভারসাম্যপূর্ণ বিশ্রাম।

৪. 💊 যারা নিয়মিত উচ্চ রক্তচাপের ওষুধ খাচ্ছেন

**কারণ:
উচ্চ রক্তচাপের ওষুধ অতিরিক্ত খেলে বা ডোজ ঠিক না থাকলে রক্তচাপ স্বাভাবিকের নিচে নেমে যেতে পারে।
**উদাহরণ:
* বিটা ব্লকার
* ডিউরেটিক ওষুধ
* ACE ইনহিবিটার

**প্রতিকার:
চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া ওষুধের মাত্রা পরিবর্তন করবেন না।

৫. 🧘‍♂️ অতিরিক্ত ওজন কমানো বা ডায়েটকারীরা

**কারণ:
হঠাৎ করে ক্যালোরি কমিয়ে দেওয়ায় শরীরে গ্লুকোজের ঘাটতি হয়, যা রক্তচাপ কমিয়ে দেয়।

**লক্ষণ:
* দুর্বলতা
* ঘাম
* হাত-পা ঠান্ডা হয়ে যাওয়া

**প্রতিকার:
সঠিক পুষ্টিগুণ বজায় রেখে ডায়েট করুন। একদম না খেয়ে থাকবেন না।

৬. 🧠 মস্তিষ্ক বা নার্ভ সমস্যায় আক্রান্ত ব্যক্তিরা

**কারণ:
নিউরোলোজিক্যাল সমস্যা বা পারকিনসন রোগে রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণের প্রক্রিয়া বাধাগ্রস্ত হয়।
**উদাহরণ:
* অটোনমিক ডিসফাংশন
* মাল্টিপল স্ক্লেরোসিস

**প্রতিকার:
নিয়মিত চিকিৎসা, স্নায়ুরোগ বিশেষজ্ঞের পরামর্শ ও খাদ্য নিয়ন্ত্রণ।

 ৭. 🧬 জেনেটিক বা বংশগতভাবে যাদের প্রেসার কম থাকে

**কারণ:
কিছু পরিবারে স্বাভাবিকভাবেই ব্লাড প্রেসার নিচু হয়ে থাকে।

**লক্ষণ:
* সব সময় মাথা ভার
* খাওয়া না হলে হাত কাঁপে
* দ্রুত ক্লান্ত হওয়া

**প্রতিকার:
খাবারে লবণের পরিমাণ সামান্য বাড়ানো, স্যালাইন পান, বেশি পানি খাওয়া।

৮. ⛅ **ডিহাইড্রেশনে ভোগা ব্যক্তিরা

**কারণ:
ঘাম, বমি বা ডায়রিয়ার কারণে শরীর থেকে পানিশূন্যতা হলে রক্তচাপ হঠাৎ কমে যেতে পারে।
**লক্ষন:
* মুখ শুকিয়ে যাওয়া
* প্রস্রাব কমে যাওয়া
* চেহারায় ফ্যাকাশে ভাব

**প্রতিকার:
প্রতিদিন ৮–১০ গ্লাস পানি পান করুন, প্রয়োজনে ওরস্যালাইন নিন।

. 🍷 অ্যালকোহল ও ধূমপানকারীরা

**কারণ:
অ্যালকোহল প্রথমে রক্তচাপ কমিয়ে পরে হঠাৎ বাড়িয়ে দেয়। ধূমপানও রক্তনালী সংকুচিত করে রক্তচাপকে অস্থির করে তোলে।

**প্রতিকার:
এই অভ্যাস ত্যাগ করুন। প্রয়োজনে কাউন্সেলিং নিন।

১০. 🏃‍♂️ অতিরিক্ত ব্যায়াম বা হঠাৎ শারীরিক পরিশ্রমে যারা থাকেন

**কারণ:
বেশি ব্যায়ামের ফলে শরীরে ঘাম ও এনার্জি খরচ হয়, যেটা শরীরে পানির ঘাটতি তৈরি করে।
**প্রতিকার:
ব্যায়ামের আগে ও পরে পর্যাপ্ত পানি পান করুন এবং পুষ্টিকর খাবার খান।

 📌 সংক্ষেপে – কারা বেশি ঝুঁকিতে?

 প্রবীণ ব্যক্তিরা যাদের হৃদযন্ত্র দুর্বল ও রক্তনালী সংকোচনে ভুগেন।
 গর্ভবতী নারীরা যারা হরমোন পরিবর্তনের সমস্যায় থাকেন।                      
 ডায়েটকারীরা যারা গ্লুকোজ ঘাটতিতে ভুগেন।                      
 ওষুধ সেবনকারীরা যারা অতিরিক্ত ডোজ গ্রহন করেন।                     
 নার্ভ সমস্যায় যারা স্নায়ু নিয়ন্ত্রণ দুর্বল ভুগে থাকেন।            
রোগা ও দুর্বল গঠন যাদের কম রক্ত সঞ্চালন হয়।               
ডিহাইড্রেটেড ব্যক্তি যারা শরীরে পানির ঘাটতিতে রয়েছেন                 
 জেনেটিক হাইপোটেনশন বা যাদের জন্মগতভাবে প্রেসার কম।              

 ✅ লো প্রেসার প্রতিরোধে করণীয়

* নিয়মিত রক্তচাপ মাপুন
* দিনে ৮–১০ গ্লাস পানি পান করুন
* খাবার বাদ না দিয়ে ৪–৫ বার খান
* প্রচুর ফল ও সবজি খান
* রসুন, কলা, বিটরুট নিয়মিত রাখুন
* ধীরে ধীরে উঠা–বসা করুন
* শরীরে আয়রন ও ভিটামিন B12-এর ঘাটতি না রাখুন

🎯 অভিজ্ঞতার আলোকে টিপস

🔹 আমি নিজে সকালে ঘুম থেকে উঠে হঠাৎ দাঁড়ালে মাথা ঘোরা অনুভব করি।
🔹 একদিন সকালে কিছু না খেয়ে বাইরে গিয়েছিলাম, রাস্তায় হঠাৎ মাথা ঘুরে পড়ে যাই। পরে চিকিৎসক জানান, এটি হাইপোটেনশনের কারণেই হয়েছে।
🔹 প্রতিদিন সকালে ১টি কলা, ১ গ্লাস গ্লুকোজ পানি এবং মাঝে মাঝে লবণ-চিনি মেশানো পানি খাওয়ার ফলে এখন প্রায় স্বাভাবিক জীবনযাপন করছি।

❗ কখন চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া জরুরি?

* রক্তচাপ ৯০/৬০ mmHg এর নিচে থাকলে
* বারবার মাথা ঘোরা, ক্লান্তি ও অজ্ঞান হয়ে যাওয়ার ঘটনা ঘটলে
* নিয়মিত ওষুধের প্রভাবের কারণে প্রেসার কমে গেলে
* অতিরিক্ত পানি পানের পরেও লক্ষণ না কমলে

🔚 উপসংহার
নিম্ন রক্তচাপ একদম উপেক্ষা করার মতো বিষয় নয়। যদিও অনেকেই এটিকে গুরুতর মনে করেন না, বাস্তবে এটি অনেক সময় শরীরের সংকেত হতে পারে বড় কোনো অসুস্থতার। তাই কে কে বেশি লো প্রেসারে ভুগতে পারেন, সেটি জানা এবং সময়মতো চিকিৎসা নেওয়া খুব জরুরি।
> নিজের শরীরকে ভালোবাসুন, সচেতন থাকুন, নিয়ম মেনে জীবন যাপন করুন।